The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪

ঈদে বাড়ি ফেরা হয় না তাদের!

হেদায়েতুল ইসলাম নাবিদ, কুবিঃ সূর্যাস্তের সাথে সাথে পৃথিবী থেকে দিনের আলোর বিদায়। শুরু হয় রাত্তিরের। দিনের কোলাহল মিলিয়ে যায় ঠিক অস্ত যাওয়া সূর্যের মতোই।

চোখে মুখে একরাশ হতাশা আর আর ক্লান্তি নিয়ে প্রতিদিনকার মতো চলে ক্যাম্পাসকে নিরাপদ রাখার আয়োজন। চারদিকে সুনশান নীরবতা। এরচেয়ে বেশি নীরবতা বিরাজ করছে একেকজন নিরাপত্তা প্রহরীর মনে।

সামনেই ইদ। সবাই বাড়ির উদ্দেশ্যে আস্তে আস্তে ক্যাম্পাস ছেড়ে যাচ্ছে। উদ্দেশ্য পরিবারের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করা। কিন্তু তাঁদের ক্ষেত্রে আর হলো কই। বাড়ি থেকে কয়েকশো কিলোমিটার দূরে চলবে তাঁদের ঈদ আনন্দ। অবশ্য আনন্দ নাকি নিছক নিয়ম রক্ষা এটা বলে দায়। বলছি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যদের কথা। ঈদ আসলে সবাই ব্যস্থ বাড়ি ফেরা নিয়ে। কিন্তু তাঁরা বাড়ি ফিরতে পারবে না। তাঁদের কাঁধে যে গুরুদায়িত্ব দেওয়া। ক্যাম্পাসকে নিরাপদ রাখার দায়িত্ব।

বিশ্ববিদ্যালে মোট আনসার সদস্য আছে ২৫ জন। এরমধ্যে ইদের ছুটি পেয়েছেন মাত্র ৪ জন। আর বাকিরা দিবে ক্যাম্পাস পাহারা। যারা ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন তাঁরা হয়তো পরিবারের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে পারবে না কিন্তু সহকর্মীদের সাথেই কাটবে তাঁদের ঈদ। এ এক অন্যরকম ঈদ। এক ঈদে যারা বাড়ি ফিরবে অন্য ঈদে তাঁরা ফিরতে পারবে না৷ একজন রোজার ঈদে ছুটি পেলে কোরবানির ঈদে ছুটি পাবেন না। এনিয়ে তাদের আফসোস হলেও অন্য সহকর্মীরা যে পরিবারের সাথে ঈদ পালন করতে পারছে এতেই তাঁদের আনন্দ।

ঈদে বাড়ি ফেরা নিয়ে কথা হলো আনসার সদস্য লতিফের সাথে। তিনি একটু হতাশ হয়েই বলতে শুরু করলেন, পরিবারের জন্য টাকা ইনকাম করি অথচ পরিবারের সাথে ঈদ পালন করা হয় না। ঈদে বাড়ি গেলে সবার সাথে দেখা হয়, তাছাড়া পরিবারের সাথে ঈদ উদযাপন করার মধ্যে একটা শান্তি আছে। আমি গত কয়েকবছর বছর যাবত পরিবারের সাথে ঈদ উদযাপন করতে পারি না। ঈদের সময় ছুটি নেই না। কারণ তখন গাড়ি ভাড়া বেশি। এখান থেকে উত্তরবঙ্গে যাইতে যত ভাড়া ঈদের সময় তা আরো তিন চারগুণ বেশি হয়ে যায়। এজন্য ঈদে বাড়ি যাওয়া হয় না। তাছাড়া সবাই যদি ঈদে বাড়ি যায় ডিউটি দিবে কে।

এসময় আরেক আনসার সদস্য বলে উঠলেন মামা বাড়ি একটা ঠিহানা না! বাড়ি একটা ঠিহানা। তবে মামা ঈদ যেখান থেকেই করি আল্লাহ দোয়া কবুল করবো না মামা? কবুল তো করবোই। বাড়ি যাওয়ার পর পরিবারের সাথে ঈদ করার মধ্যে আনন্দ থাকে। কিন্তু চাকরির কারণে সব ঈদে বাড়ি যাওয়া হয় না। তবে মামা কোরবানির ঈদে আমি যেকোনো মূল্যে বাড়িতে যাবই।

এবার ঈদে পরিবার ছাড়া ঈদ উদযাপন করবে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে দায়িত্বরত ১৯ জন আনসার সদস্য। মুসলমানদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুই ঈদ। এই দুই ঈদে প্রত্যেকেই চায় পরিবারের সাথে পরিবারের সাথে থাকতে। কিন্তু কাঁধে তাঁদের রয়েছে গুরুদায়িত্ব। এই দায়িত্বের দায়বদ্ধতা থেকেই ঈদ আনন্দ বিসর্জন দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে রাখছে নিরাপদ। তাঁদের এই ত্যাগই মনে করিয়ে দেয়, মানুষ একে অপরের জন্য। কেউ একজন সুখ পেতে হলে অপর আরেকজনকে ত্যাগ করতেই হবে।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.