মাভাবিপ্রবি প্রতিনিধিঃ ১৪ দিনের ছুটিতে শিক্ষার্থীরা বাসায় চলে গেলেও ফাঁকা নেই মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। ঈদের বন্ধের পর প্রতিদিন সকাল থেকে পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। ঈদের দিন থেকে যা অনেকটাই বেড়েছে। স্থানীয় দর্শনার্থীদের পাশাপাশি দূরবর্তী এলাকা থেকেও বাড়ছে দর্শনার্থীদের সংখ্যা।
গত বুধবার (৩ এপ্রিল) রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় পবিত্র মাহে রমজান, শব-ই-কুদর, জুমাতুল বিদা, ইদ-উল-ফিতর ও বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে ৬ এপ্রিল থেকে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকবে। এছাড়া ১৮ ও ১৯ এপ্রিল যথাক্রমে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার হওয়ায় দুইদিন বেশি ছুটি পাবে শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, ১৪ দিনের এই বন্ধ থাকার পরেও ফাঁকা নেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। সকাল ৯টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত দেখা মিলে দর্শনার্থীদের ভিড়। সব থেকে বেশি ভিড় থাকে বিকাল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। ছোট থেকে বৃদ্ধ সকল বয়সের মানুষের দেখা মিলে এ সময়।
দর্শনার্থীদের মধ্যে ফারজানা আক্তার মিম নামে একজন ক্যাম্পাসের সৌন্দর্যের ভিডিও ধারণ করছিলেন। তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয় যেহেতু টাঙ্গাইলে অবস্থিত আমি সময় পেলেই এখানে ঘুরতে আসি। এখানকার পরিবেশ আমার কাছে খুবই ভালো লাগে। এক কথায় বলতে গেলে ভার্সিটির সৌন্দর্য ভাষায় বলে প্রকাশ করা যাবে না।’
কয়েকদিনের টানা বন্ধে কর্মজীবীদের মাঝে খুশির আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে। অবশ্য ছুটির প্রথমদিকে তেমন দর্শনার্থী ছিল না। ঈদের দিন থেকেই বেড়েছে এর সংখ্যা। সবচেয়ে বেশি দর্শনার্থীদের দেখা মিলে প্রশাসনিক ভবন ও একাডেমিক ভবনের সামনে।
ঈদের ছুটিতে নেত্রকোনা থেকে টাঙ্গাইলে আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে আসা আরকান আহমেদ নামে একজন বলেন, ‘আমি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী। আমার নানার বাসা ময়মনসিংহ বাকৃবি ক্যাম্পাসে পাশে। সেই ক্যাম্পাসেই অধিকাংশ সময় কাটে। এই ক্যাম্পাস সম্পূর্ণ আলাদা, ক্যাম্পাসটি ছোট হলেও অনেক সাজানো গোছানো। সেখানে (বাকৃবিতে) এত বড় বড় বিল্ডিং নেই। এটি যে কোনো মানুষের পছন্দ হওয়ার মতো ক্যাম্পাস। আমার প্রথম দেখাতেই অনেক পছন্দ হয়েছে।’
একাডেমিক কাম রিসার্চ ভবনের সামনে দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে দেখা মিলে জনসংযোগ ও প্রেস প্রকাশনা দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আজিজুল হকের। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্ম দিবসের শত ব্যস্ততার পরে এই বন্ধ সময়টুকু পরিবারের সঙ্গে ক্যাম্পাসেই উপভোগ করছেন। দর্শনার্থীদের দেখে তিনিও খুব আনন্দিত।
তিনি বলেন, ‘আমার কাছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস দুনিয়ার শ্রেষ্ঠতম জায়গা। মুখরিত ক্যাম্পাস আমার সবচেয়ে ভালোলাগার অনুভূতি। দর্শনার্থীরা ক্যাম্পাসে এসে মুগ্ধ হবে, বিস্মিত হবে সেটাই স্বাভাবিক। তাদের সে সুযোগ দেয়া উচিত। একইসঙ্গে আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে, তাদের এই ঘোরাঘুরিতে আমাদের শিক্ষার্থীদের ও ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তা যাতে কোনভাবেই বিঘ্নিত না হয়। তাই আমাদের নিরাপত্তাপ্রহরীদের খুবই সজাগ থাকতে হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী আলী আকবর, যার বেড়ে ওঠাও এই ক্যাম্পাসে। তিনি বলেন, ‘আমার বাসা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে হওয়ার কারণে সবচেয়ে বেশি সময় এখানেই কাটে। এখানে পড়ার আগে থেকেই ক্যাম্পাসে আসা-যাওয়া। তাই সবসময় দেখে আসছি ঈদের সময় সবার অফিস বা কর্মক্ষেত্র ছুটি থাকে, তখন পরিবার পরিজনদের নিয়ে সময় কাটানোর জন্য এই জায়গা বেছে নেন অনেকে। এতো বড় ফাঁকা জায়গা এবং সুন্দর পরিবেশ টাঙ্গাইলের কোথাও নেই। গত কয়েকবছর ধরে লোকজনের ভীড় বেশ চোখে পড়ার মতো। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় কাঠামোগত দিক দিয়েও অনেক পরিবর্তন হয়েছে, সৌন্দর্যও বৃদ্ধি পেয়েছে।