আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মিসাইল হামলার জবাব দিতে ইরানে পাল্টা হামলা চালানোর ঘোষণা দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। এ লক্ষ্যে ব্যাপক ও বড় হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিয়েছে দখলদার ইসরায়েলের সেনাবাহিনী। খবর- ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম পাবলিক ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন।
শনিবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক এক ভাষণে হামলার ঘোষণা দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী।
নেতানিয়াহু বলেন, সম্প্রতি ইরান ইসরায়েলের যে মাত্রার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে, বিশ্বের অন্য কোনো দেশ তাদের ভূখণ্ড ও জনগণের ওপর এই মাত্রার হামলা বরদাস্ত করবে না, ইসরায়েলও করবে না। নিজের ভূখণ্ড ও নাগরিকদের রক্ষা করা শুধু অধিকারই নয়, এটি ইসরায়েলের দায়িত্বও। ইসরায়েল সেই দায়িত্ব নিশ্চিতভাবেই পালন করবে।
এদিকে, শনিবার পাবলিক ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন এক প্রতিবেদনে বলেছে, সেনাবাহিনী ইরানের মিসাইল হামলার শক্তিশালী জবাবের পরিকল্পনা করছে। যদিও তাদের মিসাইল আমাদের বড় কোনো ক্ষতি করেনি। কিন্তু এই হামলার জবাব অবশ্যই দিতে হবে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ইরানের বিরুদ্ধে হামলায় যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশগুলোর সহায়তা পাওয়ার চেষ্টা করছে দখলদার ইসরায়েল।
ইরানের ওপর হামলার পরিকল্পনা ঠিক করতে এই সপ্তাহে ইসরায়েলে যাওয়ার কথা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ডের কমান্ডার জেনারেল মিখায়েল কুরিল্লার।
আলাদা প্রতিবেদনে হিব্রু ভাষার সংবাদমাধ্যম হারেৎজ জানিয়েছে, ইসরায়েল ইরানের বিরুদ্ধে হামলার যে পরিকল্পনা সাজাচ্ছে, সেখানে ইরানের পাল্টা জবাবের বিষয়টিও মাথায় রাখা হচ্ছে। অর্থাৎ ইরান আবারও মিসাইল ছুড়বে এমন বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই তারা হামলার ছক কষছে।
হারেৎজ আরো জানিয়েছে, ইরানে হামলার প্রস্তুতি হিসেবে গাজায় ইসরায়েলি সেনারা তাদের বর্বরতা বৃদ্ধি করছে।
ইয়েদিওথ নামের আরেক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ইরানের বিরুদ্ধে হামলার পরিকল্পনা ঠিক করতে ইউরোপের কয়েকটি দেশের কর্মকর্তারা ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের সঙ্গে তেলআবিবে বৈঠক করেছেন।
ইরানের সমর্থন ও মদতপুষ্ট সশস্ত্র ইসলামি গোষ্ঠী হিজবুল্লাহকে দমনে গত ৩০ তারিখ থেকে দক্ষিণ লেবাননে অভিযান শুরু করে ইসরায়েলের স্থল বাহিনী। এ অভিযান শুরুর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে, ১ অক্টোবর সন্ধ্যার পর থেকে ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে একের পর এক ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া শুরু করে ইরানের সেনাবাহিনীর এলিট শাখা ইসলামিক রেভোল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি)। সেদিন সন্ধ্যার পর থেকে ২ অক্টোবর ভোর পর্যন্ত প্রায় ২০০ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে আইআরজিসি।
অধিকাংশ ক্ষেপণাস্ত্রই অবশ্য ক্ষেপণাস্ত্র সুরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে লক্ষ্যে আঘাত হানার আগেই ধ্বংস করে দিতে পেরেছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। তবে ঐ ঘটনার পর থেকে গুঞ্জন উঠেছিল যে ইরানে হামলা চালাতে পারে ইসরায়েল। এতদিন এ প্রসঙ্গে প্রকাশ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো কথা বলেনি জেরুজালেম। শনিবারের ভাষণে প্রথম এ ইস্যুতে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করলেন নেতানিয়াহু।
এদিকে, গত ৩ অক্টোবর এক সরকারি সফরে কাতার গিয়েছিলেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। সেখানে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, তার দেশ ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ চায় না। তবে ইসরায়েল যদি ফিলিস্তিন এবং লেবাননে সামরিক অভিযান বন্ধ না করে, তাহলে ভবিষ্যতে ইরান আরো কঠোর প্রতিক্রিয়া জানাবে।
সূত্র: টাইমস অব ইসরায়েল