The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪

ইবি শিক্ষার্থী নওরীনের রহস্যজনক মৃত্যু, চলছে মামলার প্রস্তুতি

ইবি প্রতিনিধি : আশুলিয়ায় ছয়তলা থেকে পড়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ছাত্রী নওরীন নুসরাতের রহস্যজনক মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবি করেছেন নওরীনের সহপাঠী ও পরিবারের সদস্যরা। খুব শীঘ্রই মামলা করতে পারেন বলে জানিয়েছেন নিহত নওরীনের বাবা খন্দকার নজরুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ওরা (শশুড়বাড়ির লোকজন) আমার মেয়ের সাথে এমন কিছু করেছে যার ফলে আমার মেয়ে এটি করতে বাধ্য হয়েছে। আমি মামলার প্রস্তুতি সম্পর্কে আলোচনা করতে ঢাকায় অবস্থান করছি। হয়তো খুব শীঘ্রই মামলা করব। এর আগে তিনি অভিযোগ করেছিলেন, বিয়ের পরে নওরীনকে লেখাপড়ার সুযোগ দেয়ার কথা থাকলেও পরে তা দেয়া হচ্ছিলনা। এছাড়াও বাচ্চা নিতে জোর করে তার শাশুড়ি। আমাদের সাথে যোগাযোগ না করতে পারে একারণে একঘড়ে করে রাখা হয় নওরীনকে।

এর আগে, শনিবার দুপুরে নওরীনের মৃত্যু রহস্য উদঘাটনের দাবিতে মানববন্ধন করেন নওরীনের বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

মানববন্ধনে নওরীনের সহপাঠীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতি অঙ্গনের প্রিয় মুখ ছিলেন নওরীন। একজন বিতার্কিক হিসেবে যার যুক্তিতে বিপক্ষ দলের ভীত নড়ে যেতো সে কিনা আত্মহত্যা করেছে এটা আমরা মেনে নিতে পারিনা। এমনটা করতে বাধ্য করা হয়েছে।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন নওরীনকে তার স্বামী বাসায় আটকে রেখে অফিসে যেতো। এছাড়াও পড়তে না দিয়ে দ্রুত বাচ্চা নিতেও চাপ দিচ্ছিলো শশুড়বাড়ির লোকেরা। শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, আমরা চাই তার মৃত্যুরহস্যের জট খুলুক এবং সত্যটা সামনে আসুক। এছাড়াও দোষীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।

এ বিষয়ে নওরীনের বিভাগের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক সাহিদা আক্তার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন কোনো সংগঠন বা এমন কোনো মঞ্চ নাই যেখানে নওরীনের পদচারণা হয়নি। মৃত্যুর দুইদিন আগে আমাকে কল দিয়েছিলো সে। মাস্টার্সে ভর্তির লাস্ট ডেট ছিলো। সে আমাকে বলেছিলো কিছু সমস্যার কারণে আসতে পারবেনা কোনো ভাবে ম্যানেজ করা যায় কিনা! যেহেতু শিক্ষার্থীকে উপস্থিত থেকে স্বাক্ষর দিতে হয় তাই আমি তাকে অনুমতি দেয়নি। ভর্তির আগেরদিনো যখন সে আসতেই পারবেনা বলে আমাকে জানালো তখন আমি তাকে তার স্বাক্ষর স্ক্যান করে মেইলে পাঠাতে বলি। তখনও আমার মনে হচ্ছিলো যে খারাপ কিছু হচ্ছে। দূর্ঘটনার পর ওর মা আমাকে ফোন করে জানালো। যে মানুষটা সকল অন্যায় অনাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলো সে কিভাবে নিজেকে এমন করতে পারে? নিশ্চয় কোনো কারণ ছিলো। পারিবারিকসূত্রে সকল কথা জানতে পারি। সুস্থতার জন্য নওরীন গুরুত্বপূর্ণ ঔষধ সেবন করতো। বিবাহের পর তার সকল ঔষধ সেবন করা বন্ধ করে দেয়া হয়। যার ফলে আরো মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পরে সে। কারও সাথে যেনো কোনো যোগাযোগ করতে না পারে তাই শুধু একটি ঘরে আবদ্ধ করে রাখা হতো তাকে। ভয়াবহ ব্যাপার হলো ঐ ঘরে কোনো ইন্টারনেট সুবিধা নাই। এসকল বিষয়ের উত্তর আমরা চাই।

তিনি অভিযোগ করেন তাকে নিয়মিত টর্চার করা হয়েছে। মৃত্যু হওয়ার ছয় ঘন্টা আগে তার শুশুরবাড়ি থেকে ফোন করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়েছে, ভয় দেখানো হয়েছে যেগুলো পুলিশ জানিয়েছে। এসকল অনেক গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস রয়েছে যেগুলো থেকে বুঝা যায় যে তাকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করা হয়েছে বা তার পেছনে কারও হাত রয়েছে। তাহলে আজ কোন শক্তির বলে আমার নওরীন কবরে শুয়ে আছে।

তিনি বলেন, নওরীন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে চেয়েছিলো, যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আদর্শ হতে চেয়েছিলো সে কিভাবে অন্ধকার কবরে শুয়ে আছে। আজকে এই মানববন্ধনে থেকেই আমি আমার মেয়েতুল্য, আমার ছাত্রীর জন্য, বাংলাদেশের একজন সুনাগরিকের জন্য বিচার দাবি করছি। সুষ্ঠু তদন্ত করা হোক। যারা আমার মেয়েকে অন্ধকার কবরে পাঠিয়েছে তাদের সুষ্ঠু বিচার করা হোক।

তবে পরিবার থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো অভিযোগ না থাকায় মৃত্যুর দিন পুলিশের পক্ষ থেকে আশুলিয়া থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়। তবে এ বিষয়ে আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে একাধিক কল করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

নওরীনের বাবার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তার শশুড়বাড়ির স্বজনরা। তারা জানান, নওরীন নিজে থেকে ডিপ্রেসড ছিলো এবং হাই পাওয়ারের ঔষুধ সেবন করতো। নওরীনের মা নিজেই বাচ্চা নিতে জোর করত। আমরা তাকে কোনো নির্যাতন করিনি।

নওরীন নুসরাত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ল’ এন্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবেটিং সোসাইটির সভাপতি ছিলেন। গত ৮ আগস্ট স্বামীর ভাড়া বাসার ছয় তলা ভবনের ছাদ থেকে পড়ে মারা যান নওরীন। প্রাথমিকভাবে পুলিশ এটি আত্মহত্যা বলে জানান। এরো আগে গত ২১ জুলাই চাঁদপুরের ছেলে ইব্রাহীম খলিলের সাথে তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ইব্রাহীম ভলভো ব্যাটারি কোম্পানিতে কর্মরত।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.