নিজস্ব প্রতিবেদক: রাতের বাসে কুষ্টিয়া শহর থেকে ক্যাম্পাসে ফেরার পথে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) সিনিয়র ২ শিক্ষার্থীকে হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে। হেনস্তার ঘটনায় আজ (২৭ জুন) ভিসি, ছাত্র উপদেষ্টা ও প্রক্টর বরাবর বিচার চেয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী ২ শিক্ষার্থী। ভুক্তভোগীরা হলেন, বাংলা বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাদিয়া তাসনিম বিপাশা ও আসমা আরা।
অভিযোগ পত্র সূত্রে, গত ১৯ জুন কুষ্টিয়া শহর থেকে রাতের বাসে সাদিয়া তাসনিম বিপাশা ও আসমা আরা, তাদের সহপাঠী এবং পরিচিত কয়েকজন ডাবল ডেকার বাসে ক্যাম্পাসে ফিরছিলো। এসময় বাসের ২য় তলায় একজন বহিরাগত লোক ওঠে। কিছুক্ষণ পরে বাসের হেলপার ওই লোককে নামতে বলেন এবং শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ওই লোককে নামানোর জন্য তার উপর চাপ আসছে বলে জানান। পরে সেখানে থাকা এক জুনিয়রও ওই লোককে নামানোর জন্য হেলপারকে বলে। ঠিক তখনই ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী জিয়ন সরকার ওই জুনিয়রের কলার চেপে ধরে এবং তার সাথে ঝামেলায় জড়ায়। তখন আসমা আরা জিজ্ঞেস করেন তারা ঝামেলা করছে কেন? ক্যাম্পাসের বাসে বাইরের লোক উঠার তো নিয়ম নেই।
এমতাবস্থায় ল’ এন্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নওরিন নুসরাত বলেন, মানবিক দিক থেকে তো উনাকে নিতে পারি। আসমা আরা এ কথার উত্তর দিলে জিয়ন সরকার তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, এই মেয়ে আপনার নাম কি? সেশন কত? আমি কে আমাকে চেনেন ? আপনার সাহস হয় কি করে আমার কথার মধ্যে কথা বলবার।
এরপর বাসের অনেকে কথা বলে উঠে এবং একে অপরের সাথে কথা কাটাকাটি শুরু হলে ব্যাপারটা থেমে যায়। কিন্তু ক্যাম্পাস গেটে বাস আসলে হঠাৎ করে বাস থামিয়ে দেয় এবং নওরিন এসে আসমা আরাকে বলে জিয়নের পুরুষ ইগো হাট হয়েছে ও এখন আপনাদের সাথে ঝামেলা করবে। আপনারা কি পারবেন নিজেদের সেইফ করতে। আসমা আরা বলে জিয়ন ঝামেলা করবে আর তুমি প্রকাশ্য সেটা আমাকে বলতে এসেছ ? এত সাহস কোথায় থেকে পাও। নওরিন বলে যার সাহস আছে সে তো সাহস দেখাবেই। এরমধ্যেই জিয়ন নীচে গিয়ে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষের সিয়াম সহ বেশকয়েক জনকে ডেকে নিয়ে আসে। এরপর বাসে উঠে সিয়াম অশ্লীল ভাষায় অনবরত গালি দিতে থাকে। জিয়ন আসমা আরাকে দেখিয়ে দিয়ে বলে এই আপু ঝামেলা করেছে। তখন সিয়াম তাকে উদ্দেশ্য করে গালি দেয়, হাত ধরে টানাটানি করে এবং বাস থেকে নামিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে । এরপর সিয়াম এবং নওরিন বলে তার পরিচিত কাউকে ফোন দিতে। তাদের সাথে ঝামেলা করার জন্য।
এই পরিস্থিতি দেখে আসমা আরার বান্ধবী সাদিয়া তাসনীম বিপাশা ব্যাগ থেকে ফোন বের করে তখন জিয়ন থাবা দিয়ে ফোন কেড়ে নেয়। আর ভিডিও ধারন করছিলো বলে অভিযোগ করে। তারপর ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ইংরেজি বিভাগের রাহুল, আইসিটি বিভাগের রেজা, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি (মিশু) ঝামেলা থামানোর চেষ্টা করলেও তারা মারমুখী আচরণ করে।
অশ্লীল ভাষায় গালাগালি ও হাত ধরে টানাটানির বিষয় জানতে চাইলে সিয়াম বলেন, তার সাথে আমার কোন বডি কন্টাক হয়নি। ওনাদের আমি কোন অস্রাব্য ভাষায় গালি দেইনি। উনি যে অভিযোগ করেছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা এগুলো আমাদের উপর চাপানো হচ্ছে। বরং ওই আপু জিয়ন ও নওরিন আপুকে নিয়ে অশ্লীল কথা বলছিল। এছাড়া তারা আমাদেরকে উচ্চস্বরে বলছিল, এই তুমি চুপ করো। আমরা যখন বাস থেকে নেমে যাচ্ছিলাম তখন তারা বলছিল তোমাদেরকে দেখে নেব। তারা বড় ভাইদের উপস্থিতিতে আমাদের উপর চড়াও হয়েছেন।
এছাড়া অভিযুক্ত নওরীন নুসরাতকে মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে ছাত্র উপদেষ্টা প্রফেসর ড. শেলীনা নাসরীন বলেন, অভিযোগ দেওয়ার ব্যাপারে এক ছাত্রী আমাকে ফোন দিয়েছিল। আমি তাকে বলেছিলাম, এখন যেহেতু অফিস ছুটি অভিযোগ দিলেও ব্যবস্থা নিতে পারবো না। সেহেতু তাকে ছুটির পরে সরাসরি অফিসে এসে অভিযোগ দিতে বলেছি।