মোস্তাক মোর্শেদ, ইবি : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ক্যাম্পাস সংলগ্ন শেখপাড়া বাজারে ইবির দুইজন শিক্ষার্থীকে মারধোরের ঘটনায় এজাহারভূক্ত মূল দুই আসামী আকাশ ও আলীমকে গ্রেপ্তার করেছে শৈলকুপা থানা পুলিশ।
বুধবার (১৫ মার্চ) সকালে তাদের গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম। তিনি জানান, আমরা আজ সকালে ক্যাম্পাস পার্শ্ববর্তী শেখপাড়া থেকে তাদের গ্রেপ্তার করি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে করা মামলায় তাদের দুইজনের নাম ছিলো এবং অজ্ঞাতনামা আরো ২০-২৫ জনের নামও ছিলো। আমরা গতকালও জাহাঙ্গীর নামে সন্দেহভাজন একজনকে গ্রেপ্তার করেছি। তদন্তসাপেক্ষে বাকীদেরও খুব শীঘ্রই গ্রেপ্তার করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ আজাদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় সর্বদা পুলিশ প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ রেখেছে। আমাদের ছাত্রের উপর হামলায় কাউকেই ছাড় দেয়া হবেনা। ইতিমধ্যে মূল আসামী ২ জন সহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঝিনাইদহের এসপি মহোদয়ের সাথে আমার সার্বক্ষণিক কথা হচ্ছে এ বিষয়ে। আপাতত বহিরাগতদের ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছেনা। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এ আদেশ বহাল থাকবে।
এর আগে, মঙ্গলবার রাত ৩ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ.এম.আলী হাসান বাদী হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন শিক্ষার্থীকে মারধোরের অভিযোগে শৈলকুপা থানায় আকাশ ও আলীমকে মূল অভিযুক্ত করে অজ্ঞাতনামা ২০-২৫ জনের নামে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় ইবির দুইজন ১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান সুপ্ত ও জিসাদের উপর অতর্কিত হামলা ও প্রাণনাশের চেষ্টার বিষয়টি উঠে আসে।
গত সোমবার বিকালে ইবি লেকে দুইজন বহিরাগত ক্যাম্পাসের নারী শিক্ষার্থীদের ভিডিও ধারণ করলে তাদের বাঁধা দেয় সুপ্ত এবং জিসাদ। মোবাইল থেকে ভিডিও ডিলিট করতে বললে তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা ও তর্কাতর্কির সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে সুপ্ত ও জিসাদ কে ক্যাম্পাসের বাইরে দেখে নেয়ারও হুমকি দেয় তারা। পরবর্তীতে মারধোরের শিকার দুই শিক্ষার্থী বাইকের তেল ভরতে পাম্পে গেলে সেখানে তাদের এলোপাথাড়িভাবে মারে ৮ থেকে ১০ জন স্থানীয় বখাটে। প্রাণ বাঁচাতে ক্যাম্পাস গেটে দৌড়ে আসলে তাদের উদ্ধার করে ইবি মেডিকেলে ভর্তি করা হয় পরে অবস্থার অবনতি হলে তাদের কুষ্টিয়া মেডিকেলে পাঠানো হয়।
এ ঘটনা জানাজানি হলে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সংলগ্ন মহাসড়ক অবরোধ করেন। তারা বহিরাগত মুক্ত ক্যাম্পাস, শিক্ষার্থী হামলার বিচার ও নিরাপদ ক্যাম্পাস সহ তিন দফা দাবি নিয়ে এ বিক্ষোভ করেন। এতে উপস্থিত ছিলেন ক্যাম্পাসের প্রায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী। পরে রাত সাড়ে ১০ টার দিকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা, কুষ্টিয়া) ফরহাদ হোসেন অভিযুক্তদের গ্রেফতারের আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নিয়ে ভিসির বাসভবন ঘেরাও করে প্রশাসন ভুয়া ভুয়া বলে স্লোগান দিতে থাকে শিক্ষার্থীরা। একসময় উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আব্দুস সালামের আশ্বাস পেয়ে তারা যে যার হলে ফিরে যায়।
এদিকে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গতকাল মঙ্গলবার থেকে পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষেধ করে আদেশ জারি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সকালে ক্যাম্পাস, শেখপাড়া ও শান্তিডাঙ্গা এলাকায় মাইকিং করে এ ঘোষণা দেয়া হয়। এসময় ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের সবসময় আইডি কার্ড সাথে রাখার নির্দেশ দেয়া হয়।