ইবি প্রতিনিধি : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আবাসিক হলের বারান্দার গ্রিল কেটে চুরির ঘটনায় বন্ধের সময় হলের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন জেগেছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মনে। জানা যায়, শুক্রবার ছুটি থেকে হলে ফিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়াউর রহমান হলের ১১৭ নম্বর রুমের তৌহিদ দেখেন তার হলের রুমের গ্রিল কাটা এবং পাশের জানালার কাঁচ ভাঙ্গা। পরবর্তীতে রুমে ঢুকে দেখা যায় একটি কম্পিউটার, রাউটার, মাইক্রোফোন, ট্রাইপডের মতো ইলেকট্রনিক সামগ্রী সহ প্রায় ৫০ হাজার টাকা সমমূল্যের জিনিস সেই রুম থেকে চুরি হয়েছে। তবে রুমের বাকীরা এখনো না ফেরায় চুরি হওয়া জিনিসের সঠিক মূল্য জানা যায়নি।
শনিবার (৮ জুলাই) ভুক্তভুগী ল’ এন্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের স্নাতক ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী (তৌহিদ) বলেন, আমি ৭ তারিখ বিকেল ৫টার দিকে হলের খাতায় এন্ট্রি করে হলে প্রবেশ করি। তারপর আমার রুমের তালা খুলে ভেতরে প্রবেশ করতে চাইলে দরজা ভেতর থেকে বন্ধ পাই। বিষয়টি নিয়ে আমার মনে সন্দেহ জাগলে আমি হলের দায়িত্বরত মামাকে জানাই এবং তাকে নিয়ে রুমের পেছন দিকটা দেখতে আসি। তারপর তো আমি রীতিমতো অবাক হয়ে যাই। বিষয়টি আমি তৎক্ষণাৎ হল প্রভোস্টকে জানাই এবং তার সাথে আমার রুমে প্রবেশ করি।
তিনি আরও বলেন, আমি গত মাসের ২৩ তারিখ সকালে ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাই। আমি নিশ্চিত যে আমার রুমের দরজা ভালো করে লাগিয়ে গিয়েছি। রুমে আমার একটি ডেস্কটপ ছিল। যা আমি ২০২২ সালের দিকে চল্লিশ হাজার টাকা দিয়ে বানিয়েছিলাম। তা চুরি হয়ে যাওয়ায় আমার একটি বড় রকমের ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। আমি যেহেতু একজন শিক্ষার্থী তাই আমার পক্ষে দ্বিতীয়বার জিনিসটি ক্রয় করাও সম্ভব নয়।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, আমার রুমে যেহেতু গ্রিল ভেঙে চুরি হয়েছে তাই আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। তাছাড়া আমার আরও দুই জন রুমমেট রয়েছে তাদের কি কি নিয়েছে আমি জানি না। সবকিছু এলোমেলো অবস্থায় পেয়েছি। তারা আসার পর সেগুলো বলা যাবে। তবে আমার একজন রুমমেটের দৃষ্টিশক্তির সমস্যা। যার কারণে সে ভিডিও ম্যাগনিফাইং ডিভাইসের সহায়তায় পড়াশোনা করেন। চোর তার সেই ডিভাইসটি না নিয়ে গেলেও ভেঙে রেখে গিয়েছে। এটি তার জন্য অনেক বড় সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। ডিভাইসটি বাংলাদেশে সচরাচর পাওয়া যায় না।
এর আগেও একই কক্ষে চুরি হয়েছিল বলে জানা গিয়েছে। তবে বন্ধ ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকার পরেও চুরির ঘটনায় আতঙ্কিত হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা। একই সাথে চুরির কারণ হিসেবে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও দায়িত্বে অবহেলাকে দায়ী করেছেন তারা।
এ বিষয়ে হলের সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলেন, প্রতি বন্ধে হলে চুরি হওয়া একটি সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এদিকে প্রশাসনের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। আমরা বন্ধের মাঝে প্রশাসনের উপর আস্থা রেখেই আমাদের সকল কিছু হলে রেখে যাই। কিন্তু চুরির ঘটনাগুলো এখন আমাদের জীবনের নিরাপত্তার উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জিয়াউর রহমান হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শেখ এ.বি.এম জাকির হোসেন বলেন, চুরির বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি। এর-আগে আমি হলের সামনের ও পেছনের ঝোপঝাড় পরিষ্কারও করিয়েছি তবে সময় কম থাকায় পুরোপুরি পারিনি।চুরির ঘটনাটি অবশ্যই মানবিক।
এপ্রসঙ্গে সিকিউরিটি ইনচার্জ মো: আব্দুস সালাম বলেন, আমরা নিরাপত্তা কাউন্সিলের মিটিংয়ে হল গুলোর পেছনে সিকিউরিটি লাইট ও পরিস্কার করার দাবি জানিয়েছিলাম যাতে নিরাপত্তা কর্মীদের দায়িত্ব পালনে সুবিধা হয়। তবে কিছু কিছু হলের পেছনে তা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, ক্যাম্পাস বন্ধ থাকার সময় আমাদের নিরাপত্তা বলয় ছিল। আমরাও চেষ্টাও করেছি। আসলে শতভাগ সাকসেস হওয়া যায় বিষয়টি এমনও না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, আমি ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর পক্ষ থেকে লিখিত কোন অভিযোগ এখনও পাইনি। তবে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের আগে মিটিংয়ে আমরা স্ব-স্ব হলের প্রভোস্টদের হলের চারপাশ পরিস্কার ও সিকিউরিটি লাইট দিতে বলেছিলাম নিরাপত্তা জোরদারের স্বার্থে। কিছু হলের পেছনদিক পরিস্কার ছিল না। নিরাপত্তা কর্মীরাও সেদিক হয়তো ভালোভাবে যেতে পারেনি। তাই এমন অনাকাঙ্ক্ষিত চুরির ঘটনা ঘটেছে।
উল্লেখ্য, এর আগেও আল-কুরআন বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের আব্দুল খালেক নামের একজন শিক্ষার্থীর ঐ একই কক্ষ থেকে ২০২১ সালের দিকে কিছু আনুষাঙ্গিক জিনিস চুরি হয়েছিল বলে খোঁজ নিয়ে জানা যায়।