The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪

ইবিতে ৩৬ বিভাগের ৩১ টি হারিয়েছে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড

ইবি প্রতিনিধি : বিশ্বব্যাপী উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর গড় অনুপাতের ন্যূনতম মানদণ্ড ধরা হয় ১:২০। অর্থাৎ প্রতি ২০ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন করে শিক্ষক থাকতে হবে। তবে এই মানদণ্ড বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ৩৬ টি মধ্যে ৩১ টি বিভাগই। সর্বশেষ পরিসংখ্যানে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৪ হাজার ৯৯ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে রয়েছেন ৪০৫ জন শিক্ষক। এ সমীকরণে প্রতি ৩৫ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন করে শিক্ষক রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে। তবে সর্বশেষ ২০২১ সাল পর্যন্ত ইউজিসির বার্ষিক প্রতিবেদনে এই অনুপাত ছিলো ১:৪১।

সরেজমিনে বিভাগগুলো পরিদর্শন করে দেখা যায় মোট ৪০৫ জন শিক্ষকের মধ্যে বর্তমানে বিভিন্ন বিভাগের ৩০ জনেরও অধিক শিক্ষক আছেন শিক্ষা ছুটিতে এবং শিক্ষাছুটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে আরও ১০ এর বেশী শিক্ষকের।

তুলনামূলকভাবে শিক্ষক শিক্ষার্থীর এই অনুপাত কম থাকায় ক্লাস, পরীক্ষা, গবেষণা ইত্যাদি ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিভাগে পড়েছে নেতিবাচক প্রভাব। যার ফলে অধিকাংশ শিক্ষার্থীরাই সেশনজটের কবলে পড়ে ধুঁকছে। একই সাথে প্রশ্ন উঠেছে শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন গ্র্যাজুয়েট হওয়ার ব্যাপারেও।

বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইবির মোট ৮টি অনুষদের অধীনে ৩৬টি বিভাগ এবং ১টি ইনস্টিটিউট রয়েছে। যার মধ্যে শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাতে সবচেয়ে পিছিয়ে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত সোস্যাল ওয়েলফেয়ার বিভাগ। এ বিভাগে ৫টি শিক্ষাবর্ষে অধ্যয়নরত ৩৮৭ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে রয়েছেন মাত্র ৩ জন সহকারী অধ্যাপক। ফলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত দাঁড়িয়েছে ১:১২৯।

দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে একই অনুষদের ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগ। বিভাগের ৬টি শিক্ষাবর্ষের ৪৪৭ জন শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছেন ৪ জন শিক্ষক। বর্তমানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত ১:১১২। এ তালিকায় তৃতীয় স্থানে অবস্থান করছে আইন অনুষদভুক্ত ল’ এন্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগটি। স্নাতকোত্তর’সহ ৫টি শিক্ষাবর্ষের মোট ৪৪০ জন শিক্ষার্থীর জন্য আছেন মাত্র ৪ জন শিক্ষক। যাদের একজন বর্তমানে শিক্ষা ছুটিতে। বর্তমান অনুপাত ১:১১০।

সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগটির অবস্থান চার নম্বরে। বিভাগে ৫টি শিক্ষাবর্ষের ৩৯৫ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে আছেন ৪ সহকারী অধ্যাপক। বর্তমান অনুপাত ১:৯৯। তবে যৌথভাবে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে রাষ্ট্র বিজ্ঞান এবং হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগ। তাদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত ১:৯৮। রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের ৬টি শিক্ষাবর্ষের ৪৯১ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক রয়েছেন ৫ জন এবং হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ৫টি শিক্ষাবর্ষের ৩৯১ জন শিক্ষার্থীর জন্য ৩ জন সহকারী অধ্যাপক ও ১ জন প্রভাষক।

পরের অবস্থানে রয়েছে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদভুক্ত মার্কেটিং বিভাগটি। চলমান ৬টি শিক্ষাবর্ষের ৪৭২ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে রয়েছেন ৫ জন শিক্ষক। বর্তমান অনুপাত ১:৯৪। সাত নম্বরে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর ১:৭৭ অনুপাত নিয়ে ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ। পাঁচটি শিক্ষাবর্ষের মোট ৩৮৫ জন শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছেন ৪ জন শিক্ষক। ঠিক পরের অবস্থানেই ১:৭২ অনুপাত নিয়ে আছে ফার্মেসি বিভাগটি। পাঁচটি শিক্ষাবর্ষের ২৮৬ জন শিক্ষার্থীকে পাঠদান করে থাকেন ৪ জন শিক্ষক। তবে বর্তমানে ২জন শিক্ষক দীর্ঘদিন যাবত শিক্ষা ছুটিতে আছেন।

ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগটির সার্বিক চিত্রও সন্তোষজনক নয়। স্নাতকোত্তর’সহ ৬টি শিক্ষাবর্ষের ৪৯৪ জন শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক রয়েছেন ৭ জন। বর্তমান অনুপাত ১:৭১। প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগটির সারচিত্রও একই প্রকৃতির। চলমান ৫টি শিক্ষাবর্ষের ২৬৮ জন শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক আছেন মাত্র ৪ জন। আনুপাতিক হিসেবে ১:৬৭। জিওগ্রাফি এন্ড এনভায়রনমেন্ট বিভাগের ৫টি শিক্ষাবর্ষের ২৫৮ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে রয়েছেন ৪ সহযোগী অধ্যাপক। এর মাঝে একজন আছেন শিক্ষা ছুটিতে এবং বর্তমান অনুপাত ১:৬৫।

এদিকে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগে ৩২ জন শিক্ষার্থীর জন্য নেই নিজস্ব কোন শিক্ষক। অন্য বিভাগের শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা বিভাগের দুই কর্মকর্তা পরিচালনা করছেন ক্লাস কার্যক্রম। এদিকে চারুকলা বিভাগের ৩টি শিক্ষাবর্ষের অধ্যয়নরত ৯২ জন শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছেন নিজস্ব ৪ জন শিক্ষক। বিভাগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন ইংরেজি বিভাগের একজন অধ্যাপক। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত ১:২৩।

একই চিত্র বিরাজমান কমিউনিকেশন এ্যান্ড মাল্টিমিডিয়া জার্নালিজম বিভাগে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া স্বয়ং সভাপতি হিসেবে পালন করছেন অতিরিক্ত দায়িত্ব। এ বিভাগের ২টি শিক্ষাবর্ষের ৬৩ জন শিক্ষার্থীর জন্য আছেন মাত্র ২জন প্রভাষক। ফলে সমীকরণ দাঁড়িয়েছে ১:৩১।

এছাড়াও শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাতে পিছিয়ে রয়েছে ইবির আরও ১৭ টি বিভাগ। সেগুলোর মধ্যে আল-ফিকহ্ এন্ড লিগ্যাল স্টাডিজ (১:৫৪), লোক প্রশাসন (১:৪১), আল-কুরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ (১:৩৫), আইন (১:৩৪), ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি (১:৩৪), আল-হাদিস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ (১:৩৩), অর্থনীতি (১:৩৩), ব্যবস্থাপনা বিভাগ (১:৩২) অন্যতম।

তবে শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাতে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল (১:১৫), ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক (১:১৬), কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (১:১৯), ফলিত পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি (১:১৯), বায়োটেকনোলজি এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ (১:১৯)।

শিক্ষক সংকটে ভোগা এসব বিভাগের একাধিক শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা যায়, শিক্ষক সংকট থাকার কারণে ক্লাস-পরীক্ষার সমস্যাটি সব সময়ই আছে। ফলে সেশন জটের কবলে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। নির্ধারিত সময়ে শেষ হচ্ছে না শিক্ষাবর্ষ। এদিকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাতিক হার অধিক হওয়ায় মানসম্মত শিক্ষা নিয়েও অভিযোগ রয়েছে তাদের। ফলশ্রুতিতে আন্তর্জাতিক মানের গ্রেজুয়েট তৈরিতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। একই সাথে বৈশ্বিক অঙ্গনেও বেশ পিছিয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।

এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের সাথে কথা হলে তারা বলেন, প্রতিষ্ঠাকাল হিসেবে ইবি অনেক পুরোনো বিশ্ববিদ্যালয় হলেও শিক্ষার মান ও ভৌগোলিক অবস্থানে বরাবরই পিছিয়ে ছিলো। যার প্রমাণ আরো শক্ত করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীর অনুপাত।

এ বিষয়ে ল’ এন্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক সাহিদা আক্তার আশা বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাতটা অবশ্যই যুক্তিসঙ্গত হওয়া উচিত। তবে মানসম্মত শিক্ষাটা একাডেমিক কো-অর্ডিনেশন দক্ষতার উপরেও নির্ভর করে। বর্তমানে আমাদের বিভাগে যদিও কোনো ধরনের সেশন জট নেই। তবে আমাদের বিভাগে আইন এবং আল-ফিকহ্ এন্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষকরা ক্লাস নিয়ে থাকেন। তাই আমরা চাই আমাদের নিজস্ব শিক্ষক আসুক। আমাদের একাডেমিক কার্যক্রম আরও সুন্দর হোক।

সোস্যাল ওয়েলফেয়ার বিভাগের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক শ্যাম সুন্দর সরকার বলেন, মানসম্মত গ্র্যাজুয়েটের পূর্ব শর্ত হলো একটি বিভাগে যথেষ্ট শিক্ষক, ক্লাসরুম, সমৃদ্ধ সেমিনার লাইব্রেরি থাকা। আমারও এই একই প্রত্যাশা। আমাদের অবশ্যই আরও শিক্ষক দরকার। প্রশাসন বলেছে বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তবে নিশ্চিত ভাবে কিছু বলেনি। বিষয়টি এখন আমাদের জন্য বার্ডেন হয়ে যাচ্ছে। আমাদের মতো অনেক বিভাগ রয়েছে যাদের শিক্ষক প্রয়োজন।

শিক্ষক সংকটের বিষয়ে ইবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম রাইজিং ক্যাম্পাসকে বলেন, এটা মোটেও কাম্য নয়। আমি আসার পর এমনও দেখেছি দুই বছর পর্যন্ত বিভাগে শিক্ষক নেই। এতো বাধার ভেতরে আমি কেমন করে কী করবো। কেউ দেখাতে পারবে না আমার কাছে শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত কোনো একটি ফাইল দুই ঘন্টাও পড়ে ছিল। যদি দেখাতে পারে তাহলে আমি জবাবটি আরও ভালো দিতে পারবো।

তিনি আরও বলেন, অনেকক্ষেত্রে বিভাগগুলোই শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। ফার্মেসির মতো বিভাগ সেও দুই জন সহকারী অধ্যাপক দিয়ে চলছে। তবে আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি দেখা যাক কী হয়। এরপর থেকে যেখানে খালি সেখানে শিক্ষক দেওয়ার চেষ্টা করবো।

মোস্তাক মোর্শেদ ইমন/

 

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.