নিজস্ব প্রতিবেদক: গত মঙ্গলবার উপাচার্যের কার্যালয়ে শিক্ষকদেরকে হেনস্তা ও লাঞ্ছনার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) সাধারণ শিক্ষার্থীরা। শনিবার বেলা সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এসময় তারা পরিকল্পিতভাবে অছাত্র ও বহিরাগত ক্যাডার কর্তৃক শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন। এছাড়া মানববন্ধন শেষে তারা উপাচার্যের নিকটও এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন। একই সঙ্গে শাখা ছাত্রলীগের কিছু কর্মী উপাচার্যের কার্যালয়ে গিয়ে ওইদিন উপাচার্যকে হেনস্থা করা হয়েছে দাবি করে এ বিষয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
মানববন্ধনে ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মামুনুর রশিদ বলেন, গত মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক বিষয়ে কথা বলতে উপাচার্যের কার্যালায়ে শিক্ষকরা গেলে কিছু স্থানীয় বহিরাগত ক্যাডার ও অছাত্ররা তাদের হেনস্থা ও লাঞ্ছিত করে এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। আমি উপাচার্যের নিকট বলতে চাই, বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা আমাদের পাঠদান করান তারা যেন কোনোভাবে লাঞ্ছিত না হন। যেই শিক্ষকরা সমাজ বিনির্মাণে ভূমিকা পালন করেন তাদের লাঞ্ছিত হওয়া ঘটনা সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে আমরা মেনে নিতে পারি না।
এ সময় তিনি ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে বলেন, যদি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না হয় তাহলে আমরা আরও কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করবো।
এদিকে নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবিরোধী বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এসময় শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে বিশ্ববিদ্যালয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট না করার আহবান জানান নেতারা।
শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয় বলেন, ‘শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যদি কোনো যৌক্তিক দাবি থাকে তাহলে সেটা প্রশাসনের সাথে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করুক। কিন্তু কেউ শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে বিশ্ববিদ্যালয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট করে ইবি শাখা ছাত্রলীগ সেটা কখনোই মেনে নেবে না।’
সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত বলেন, ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমানে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের একটা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আমরা চাই এসব আন্দোলনের কারণে শিক্ষার্থীরা যেন কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। সরকার প্রধানের কাছে আমাদের দাবি, কোনো প্রশাসনিক পদ পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের যেন ভুগতে না হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ যেন সুষ্ঠু থাকে।’
উল্লেখ্য, গত ৬ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পেশ ইমাম পদে নিয়োগ বোর্ড ছিল। তবে সকাল সাড়ে নয়টায় ওই নিয়োগ বোর্ড বাতিলসহ ১২ দফা দাবিতে প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে ইবি কর্মকর্তা সমিতি। পরে তারা তাদের দাবি নিয়ে উপাচার্যের কার্যালয়ে দেখা করেন। এসময় উপাচার্যের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত নিয়োগ বোর্ড বন্ধ রাখার দাবি জানান। একইসঙ্গে কোনভাবেই বোর্ড করতে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন।
এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষকদের সংগঠন শাপলা ফোরামের একাংশ উপাচার্যের কার্যালয়ে দেখা করতে আসেন। তারা উপাচার্যকে নিয়োগ বাণিজ্য ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত দাবি করে নিয়োগ বোর্ড স্থগিত করার দাবি জানান। এদিকে শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা উপাচার্যের কার্যালয়ে এসে উপাচার্যের পক্ষে শাপলা ফোরাম সমর্থিত শিক্ষকদের সাথে বাকবিতন্ডায় জড়ায়। এসময় উভয়পক্ষ একে অপরকে দুর্নীতিবাজ বলে দাবি করতে থাকে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে শাপলা ফোরামের শিক্ষকরা নিয়োগ বোর্ড বন্ধ করার দাবি জানিয়ে উপাচার্যের কার্যালয় থেকে বের হয়ে প্রধান ফটক সংলগ্ন মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব ম্যুরালের সামনে মানববন্ধন করেন।