ইবি প্রতিনিধি: সরকারি চাকরি, সায়ত্ত্বশাসিত বা আধা-সায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন করপোরেশনে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহাল এবং মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতিদের ৩০ শতাংশ কোটা পদ্ধতি পুনর্বহাল করে দেওয়া উচ্চ আদালতের রায়ের প্রতিবাদ জানিয়ে কোটা বাতিল করে মেধা ভিত্তিক নিয়োগের দাবিতে কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে ৪র্থ দিনের মতো আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরা।
রবিবার (৭ জুলাই) সকাল ১১ টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব ম্যুরালে কোটা বিরোধী আন্দোলনে যুক্ত হয় কয়েকশতাধিক শিক্ষার্থী। বেলা সাড়ে ১১ টায় শিক্ষার্থীরা কুষ্টিয়া খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে দেশব্যাপি বাংলা ব্লকেডের সাথে একাত্মতা পোষণ করেন। এসময় কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ মুখী সড়কটি গাছের গুড়ি ও টায়ারে আগুন জালিয়ে ব্লক করে রাখেন আন্দোলনকারীরা। এসময় জরূরী রোগী সেবা দেয়া যানবাহগুলোকে ছেড়ে দেয়া হলেও বন্ধ রাখা হয় অন্যান্য যানবাহন। অবরোধ চলাকালীন সময়ে মহাসড়কে শিক্ষার্থীদের ফুটবল খেলতে দেখা যায়। দুই ঘণ্টার অবরোধের পর দুপুর দেড়টার দিকে শিক্ষার্থী আজকের মতো কর্মসূচি সমাপ্ত ঘোষণা করেন।
চতুর্থদিনের আন্দোলনে সরব উপস্থিতি ছিলো নারী শিক্ষার্থীদের। গত তিনদিনের তুলনায় নারীদের উপস্থিতি বেশী লক্ষ্য করা যায়। সেই সাথে কোটার বিরুদ্ধে তাদের শক্ত অবস্থান অন্যান্য শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে অনুপ্রানিত করে। নারী শিক্ষার্থীরা হলে ও মেসে বসে থাকা অন্যান্য শিক্ষার্থীদেরও আন্দোলন আসার আহবান জানান।
এ দিনও অবস্থান কর্মসূচীতে শিক্ষার্থীরা কোটাবিরোধী নানা ধরনের স্লোগান দিতে থাকে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলো আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার। জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে। লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে। দাবি এক দফা এক, কোটা নট কামব্যাক। আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম। মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই- ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের নারী শিক্ষার্থী লুনা বলেন, আমরা আন্দোলনকারীরা এখন ক্ষুধার্ত। আমাদের এই ক্ষুধা তখনই মিটবে যখন মেধাবীদেরকে তাদের মেধার ভিত্তিতে মূল্যয়ন করা হবে। এখন নারী কোটারও প্রয়োজন নেই। কারণ নারীরা আর সুবিধাবঞ্চিত নয়।
এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী আইরিন সুলতানা বলেন, আমরা নারী হয়েও আমরা নারী হয়েও নারী কোটা চাচ্ছি না। তাহলে সেই ৫৩ বছর আগের মুক্তিযুদ্ধ করা মুক্তিযোদ্ধাদের নাতী-নাতনীরা কেনো কোটার সুবিধা ভোগ করবে? আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননা করছি না। তাদের অবদান দেশের মানুষ আজীবন মনে রাখবে। কিন্তু সরকারি চাকরিতে এই ৩০% কোটা বৈষম্য সৃষ্টি করে। আমরা এর দ্রুত সমাধান চাই।
আইন বিভাগের শিক্ষার্থী শাওয়ানা শামিম বলেন, আমি নারী হয়ে অনগ্রসর নই তাহলে ঐসব গোষ্ঠী কিভাবে বলে তারা এখনো অনগ্রসর। অনগ্রসর বলতে বুঝায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা মূল স্রোতের বাইরে থাকে। আমরা তাদেরকে স্পেশাল সুবিধা দিয়ে থাকি। মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি নাতনিরা এখনো একিভূত হয়নি তা কিভাবে সম্ভব। তারা আমাদের সাথে একই বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হয়েছে। আমরা একই শিক্ষকের কাছে পড়ি, একই রাইটারের বই পড়ি তাহলে এখানে বৈষম্যের বিষয়টা আসতেছে কিভাবে? আমাদের যে বন্ধুটার মা-বাবা কৃষক, শ্রমিক, দিন মজুর তারা কি অগ্রসর গোষ্ঠী নয়? আমাকে নারী কোটা দেয়া হচ্ছে অগ্রসর হিসেবে কিন্তু আমি এমন বৈষম্য চাই না।
ছাত্র মৈত্রী ইবি শাখার সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিরুল সৌরভ বলেন, আমাদের একটাই দাবি কোটা সংস্কার, আমরা কিন্তু বাতিলের কথা বলিনি। যৌক্তিক কোটা সংস্কারের মাধ্যমে মেধাবীদেরকে প্রধান্য দেওয়া হলে কিন্তু বিভিন্ন সরকারি অফিসে আদালত থেকে শুরু করে প্রশাসন পর্যায়ে লালফিতার দৌরাত্ম্য হ্রাস পাবে। এক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরি করার যে পরিকল্পনা সেটা মেধাবীদের দ্বারা পূরণ করা সম্ভব। যদি সরকার দাবি মেনে না নেয় তাহলে শিক্ষার্থীরা রাজপথে থাকবে।
এর আগে, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের একাধিক শিক্ষক কোটাবিরোধী আন্দোলনের সাথে একাত্মতা পোষণ করেন। এছাড়াও কোটাকে সহনশীল পর্যায়ে সংস্কারের দাবি জানান।