সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি নন কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীরা। তাদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক বিজ্ঞপ্তিতে বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) সন্ধ্যায় তা জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম বলেন, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে সহিংসতা চালিয়ে সরকার উদ্ভুত পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এর দায় সরকারেরই। সরকার আলোচনার কোনো পরিস্থিতি রাখেনি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে যদি রাজপথ থেকে সরানো না হয়; হল, ক্যাম্পাস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে না দেয়া হয়; গুলি যদি অব্যাহত থাকে তাহলে সরকারকেই সম্পূর্ণ দায় নিতে হবে।
তাদের দাবি, কেবল কোটা সংস্কার করলেই ফয়সালা হবে না। প্রথমে বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে সরকার তাদের দাবি কর্ণপাত করেনি৷ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও দলীয় ক্যাডার দিয়ে আন্দোলন দমনের প্রচেষ্টা করছে। এখন সংলাপের নামে দাবি আদায়ের নামে নতুন প্রহসন করছে।
সকল ছাত্র হত্যার বিচার করতে হবে উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ক্যাম্পাসগুলোকে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসমুক্ত করতে হবে। অনতিবিলম্বে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের নিরস্ত্র করে রাজপথ থেকে অপসারণ করতে হবে। শহীদের রক্তের ওপর কোনো সংলাপ হবে না। সরকারকেই সমাধানের পথ বের করতে হবে৷
সরকারকে সমর্থন না দিয়ে ছাত্রদের পাশে থাকতে নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে আহ্বানও জানানো হয়। বাংলাদেশের জনগণকে রক্ষা করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তাদের দাবি, বাংলাদেশে গণহত্যা চলছে।
আজ রাতের মধ্যেই কোটাবিরোধী আন্দোলনের নেতাদের গ্রেফতার অথবা গুম করার শঙ্কা প্রকাশ করে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে নাহিদ ইসলাম বলেছেন, আপনারা কর্মসূচি অব্যাহত রাখবেন। সবাই জনগণকে সাথে নিয়ে প্রতিটা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করুন।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সাথে বসার বিষয়ে আজ দুপুরে ইতিবাচক বার্তা দেয় সরকার। সংসদ ভবন এলাকায় ব্রিফিংয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানান, কোটা আন্দোলনকারীদের আলোচনার প্রস্তাবকে স্বাগত জানাই। তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে দায়িত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারা যখনই বসতে চান, তখনই বসা হবে।
এরপরই কোটাবিরোধী আন্দোলনের নেতা সার্জিস আলম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন এ নিয়ে। তাতে ইঙ্গিত মিলে সংলাপে বসতে রাজি নয় সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
সার্জিস আলম স্ট্যাটাসে লিখেন, একদিকে গুলি আর লাশ অন্যদিকে সংলাপ! আমার ভাইয়ের রক্তের ওপর দিয়ে কীভাবে সংলাপ হতে পারে?
কোটাবিরোধী আন্দোলনের আরেক নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ লিখেন, গুলি আর আলোচনা একইসঙ্গে চলতে পারে না।
সংগঠনটির আরেক সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ ফেসবুকে লিখেন, রক্তের ওপর চেয়ার-টেবিল বসিয়ে চা খাওয়ার মতো দৃষ্টতা দেখাতে পারবো না। শুরুতে আমরাই বারবার সংলাপ চাচ্ছিলাম। খুন করে সেই পথ অবরুদ্ধ করেছে সরকার। সকল বাহিনীকে নিরস্ত্র করুন, খুনগুলোর জন্য দায়ী সর্বোচ্চ দায়িত্বশীলকে শাস্তির আওতায় আনুন, ক্যাম্পাসগুলো আমাদের হাতে ফিরিয়ে দিন।
তিনি আরও লিখেন, নিরস্ত্র অবস্থায় যাদের শহীদ করেছেন, তাদের রক্তের মূল্য পরিশোধ করা ছাড়া কোনো সংলাপ অসম্ভব। সারাদেশের ছাত্র-জনতার প্রতি আহ্বান করছি লড়াই চালিয়ে যাবার, প্রতিরোধ জারি রাখার। বারবার, প্রতিবার হেরে যেতে পারে না বাংলাদেশ।
কোটাবিরোধী আন্দোলনের নেতাদের এমন ফেসবুক স্ট্যাটাসের পরই আসে সংগঠনটির বিজ্ঞপ্তি। এর আগে ব্রিফিংয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানান, শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন চলাকালে বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষে নিহতের ঘটনায় হাইকোর্টের বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানকে দিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান আইনমন্ত্রী।
আনিসুল হক এ সময় আরও বলেন, আন্দোলনকারীদের দাবি ছিল কোটা সংস্কার করা। তাদের কথা বিবেচনা করে আমরাও (সরকার) রাজি হয়েছি। পিতৃতুল্য নাগরিক হিসেবে শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান, তারা যেন তাদের আন্দোলন প্রত্যাহার বা স্থগিত করেন।
দেরিতে কেন আলোচনার সিদ্ধান্ত— সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে এ সময় তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা আজ প্রস্তাব দিয়েছে আলোচনার। আমরাও বসতে চাই। তাতে দেরি কই হলো।
কোটা সংস্কারসহ আন্দোলনকারীদের সব দাবির সঙ্গে আপনারা একমত কি না, এই প্রশ্নের উত্তরে আইনমন্ত্রী বলেন, কোটা সংস্কারে বিষয়ে আমরা নীতিগতভাবে ঐক্যমত পোষণ করছি।
আইনমন্ত্রীর ব্রিফিংয়ের আগে দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংবাদি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, শিক্ষার্থীরা পড়ার টেবিলে ফিরতে চায়। সরকারের কাছ থেকে দৃশ্যমান পদক্ষেপ সমাধানের পথ তৈরি করতে পারে। আন্দোলনের পাশাপাশি আলোচনার পথও খোলা থাকবে।
তবে, সারাদিনে ঘটা নানা ঘটনার প্রেক্ষিতে শেষপর্যন্ত সরকারের সাথে আলোচনায় না বসার পক্ষেই থাকলো কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীরা।