আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপের পরবর্তী ধাপে টিকিয়ে রাখতে হলে তাঁকেই কিছু একটা করতে হবে, এটা নিশ্চয়ই লিওনেল মেসি জানতেন। মেসি সেটা করলেনও। মেক্সিকোর রক্ষণ ভেদ যখন দুঃসাধ্য মনে হচ্ছিল, তখন দুর্দান্ত এক গোল করলেন ত্রাতা হিসাবে। পরে ম্যাচের শেষদিকে তাঁর পাস থেকেই দারুণ আরও একটা গোল করলেন এনজো ফার্নান্দেসও।
লুসাইল স্টেডিয়ামে ম্যাচটা আর্জেন্টিনা জিতল শেষ পর্যন্ত ২-০ গোলে। যে জয় আর্জেন্টিনা ও মেসিকে টিকিয়ে রাখল বিশ্বকাপেও। পোল্যান্ডের বিপক্ষে গ্রুপের শেষ ম্যাচটা জিতলেই এখন পরের রাউন্ড নিশ্চিত আর্জেন্টিনার। সুযোগ থাকবে ওই ম্যাচটা ড্র করলেও।
সৌদি আরবের কাছে হেরে যাওয়া ম্যাচের একাদশে ৫টি পরিবর্তন এনে শনিবার মেক্সিকোর বিপক্ষে দল নামায় আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনি। রক্ষণভাগে শুধু নিকোলাস ওতামেন্দিকে রেখে তিনজনকেই বদলে ফেলেন। মাঝমাঠে গুইদো রদ্রিগেজ ও আলেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টারকে জায়গা দিতে বেঞ্চে চলে যান লিয়ান্দ্রো পারেদেস ও পাপু গোমেস।
কিন্তু মাঠের খেলায় এই পরিবর্তনের ছাপ পড়েছে কমই বরং প্রথমার্ধে আর্জেন্টিনাকে দেখে মনেই হয়নি এই দলটা টানা ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত ছিল সৌদি আরবের কাছে হারার আগ পর্যন্ত। খেলায় কোনো ছন্দ নেই,একটানা চার-পাসটা পাসও খেলতে পারছিলেন না আর্জেন্টাইন খেলোয়াড়েরা। বরং দৃষ্টিকটুভাবে ভুল পাস দিয়েছেন একের পর এক।
ম্যাচের প্রথম সুযোগটা পায় মেক্সিকো। ৯ মিনিটে ফ্রি-কিক থেকে আর্জেন্টিনার বক্সে বল ফেলেছিলেন লুইস চাভেজ। কিন্তু হেক্তর হেরেরা বলে পা লাগাতে পারেননি।
আর্জেন্টিনার সুযোগ আসে ৩২ মিনিটে। কর্নার থেকে আসা বল বিপদমুক্ত করতে গিয়ে রদ্রিগো ডি পলকে ফাউল করে মেক্সিকো। ফ্রি-কিক পায় আর্জেন্টিনা। কিন্তু লিওনেল মেসির শট ফিরিয়ে দেন মেক্সিকোর গোলরক্ষক গিয়ের্মো ওচোয়া।
বিরতির পরও শুরুর দিকে আর্জেন্টিনার খেলায় খুব একটা ধার বাড়েনি। ম্যাচের ৬০ মিনিটের দিকে আর্জেন্টিনার কোচ রদ্রিগেজ, মার্তিনেজ ও মন্তিয়েলকে তুলে বদলে নামান এনজো ফার্নান্দেস, হুলিয়ান আলভারেস ও নাহুয়েল মলিনাকে। গোলের জন্য আর্জেন্টিনার অপেক্ষার ব্যকুলতা ফুরায় এর কয়েক মিনিট পরেই।
৬৪ মিনিটে ডান পাশ থেকে থেকে পাস বাড়ান দি মারিয়া। মেসি ছিলেন একেবারে গোলমুখের সোজাসুজি প্রায় ২৫ গজ দূরে। সেখান থেকেই তাঁর গড়ানো শট মেক্সিকোর তিন-চারজন খেলোয়াড়ের জটলার ফাঁক দিয়ে চলে যায় জালে। মেক্সিকান গোলরক্ষক গিয়ের্মো ওচোয়া বাঁ পাশে ঝাপিয়েও ধরতে পারেননি বল।
দেশের জার্সিতে এ নিয়ে ১৬৭ ম্যাচে ৯৩ গোল হলো আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডের। বিশ্বকাপে গোলসংখ্যায়ও (৮) কিংবদন্তি ম্যারাডোনাকে ছুঁয়ে ফেললেন মেসি। আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপে এ দুজনের চেয়ে বেশি গোল শুধু গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতার, ১০ টি।
ওই গোলের পর কিছুটা গতি আসে আর্জেন্টিনার খেলায়। বদলি নামা হুলিয়ান আলভারেজ ৭৬ মিনিটে একবার বাঁ পাস থেকে দারুণ এক দৌঁড়ে ঢুকে পরে মেক্সিকোর বক্সে। তবে তাঁর ক্রসটা কাজে লাগাতে পারেননি মেসি।
শেষের ১৫ মিনিট মেক্সিকোর অর্ধেই খেলা হয়েছে বেশি, বলও বেশি ছিল আর্জেন্টিনার পায়ে। এর পুরস্কার আর্জেন্টিনার পায় ৮৭ মিনিটে এসে। কর্নার থেকে সরাসরি বক্সে বল না পাঠিয়ে ছোট পাসে জায়গা তৈরি করেছিল আর্জেন্টিনা। সেখানেই মেসি কাছ থেকে বল পেয়ে দুর্দান্ত এক গতিময় শট মেক্সিকোর জালে পাঠান এনজো ফার্নান্দেস। ওই গোলেই নিশ্চিত হয়ে যায় এই ম্যাচে আর পয়েন্ট হারাচ্ছে না আর্জেন্টিনা।
জয়ের পাশাপাশি শেষ ১৫-২০ মিনিটের খেলায় খুঁজে পাওয়া যায় চেনা আর্জেন্টিনাকে। পরের ম্যাচটার আগে এটাও সম্ভবত আর্জেন্টাইন সমর্থকদের জন্য বড় স্বস্তি।
দুটি করে ম্যাচ শেষে এই গ্রুপে ৪ পয়েন্ট নিয়ে পোল্যান্ড শীর্ষে। আর্জেন্টিনা ও ও সৌদি আরবের পয়েন্ট ৩ করে হলেও গোল ব্যবধানে এগিয়ে থাকায় দুইয়ে মেসিরা। ১ পয়েন্ট নিয়ে তলানিতে মেক্সিকো।