The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪

আন্দোলন নিষিদ্ধ, জরিমানা ৫ টাকা

বহু পুরোনো এই প্রক্টরিয়াল বিধিমালা যুগোপযোগী করে তৈরির তাগিদ। এই বিধিমালা কবে তৈরি হয়েছিল, তা সুনির্দিষ্টভাবে জানাতে পারেননি কেউ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের কোনো অংশে কোনো ধরনের আন্দোলন কর্মসূচি আয়োজন করা যাবে না। ক্যাম্পাসে স্বীকৃত সংসদ ও সংঘ ছাড়া কোনো ক্লাব, সমিতি কিংবা ছাত্রসংগঠন গঠন করতে দেওয়া হবে না।

এ নিয়মের কথা বলা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বিধিমালায়। এতে আরও বলা হয়েছে, কোনো শিক্ষার্থী শৃঙ্খলা লঙ্ঘন কিংবা অসদাচরণ করলে তাঁকে প্রক্টর সর্বোচ্চ ২৫ টাকা জরিমানা করতে পারবেন। সহকারী প্রক্টরের জরিমানার ক্ষমতা সর্বোচ্চ পাঁচ টাকা।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, প্রক্টরিয়াল বিধির কিছু নিয়ম অগণতান্ত্রিক। কিছু নিয়ম হাস্যকর। এসব নিয়ম যুগোপযোগী করা দরকার।

অবশ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানী মনে করেন, ঐতিহ্যগতভাবেই প্রক্টরিয়াল বিধির কিছু ধারার প্রয়োগ হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তবুদ্ধি চর্চার জায়গা। এখানে আন্দোলন হবে, প্রতিবাদ হবে, কিন্তু সব করতে হবে শিক্ষার পরিবেশ সমুন্নত রেখে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বিধিমালাটি ঠিক কবে তৈরি হয়েছিল, তা স্পষ্ট করে বলতে পারেননি কেউই। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে ধারণা পাওয়া গেছে যে এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালের কাছাকাছি সময়েই করা হয়েছিল। বিধিমালা অনুযায়ী, প্রক্টর হলেন আবাসিক হলের বাইরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের যেকোনো জায়গায় শিক্ষার্থীদের আচরণ ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য নিয়োজিত কর্মকর্তা।

যা যা আছে বিধিতে

প্রক্টরিয়াল বিধিমালার ৭ ধারায় বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, বিভিন্ন বিভাগ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃত ছাত্র সংসদ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী প্রক্টরের পূর্বানুমতি ছাড়া ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের সভা করতে পারবেন না। বিধির ৬ ধারা বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী ব্যক্তিগত বা সম্মিলিতভাবে শিক্ষার্থী ধর্মঘট ডাকতে পারবেন না এবং কোনো শিক্ষার্থী অন্য কোনো শিক্ষার্থীকে ক্লাস, গবেষণাগার কিংবা গ্রন্থাগারে যেতে বাধা দিতে পারবেন না। ধর্মঘটের দিনে ক্লাসে অনুপস্থিত শিক্ষার্থীরা নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃত্তি বাতিল হওয়ার জন্য নিজেরাই দায়ী থাকবেন, এমন কথাও বলা আছে প্রক্টরিয়াল বিধিমালায়।

৫ (ঘ) ধারায় বলা হয়েছে, ক্যাম্পাসে স্বীকৃত সংসদ ও সংঘ ছাড়া কোনো ক্লাব, সমিতি কিংবা ছাত্রসংগঠন গঠন করতে দেওয়া হবে না। প্রক্টরের পূর্বানুমতি ছাড়া ক্যাম্পাসে কোনো পার্টি কিংবা বিনোদনমূলক কর্মকাণ্ড করা যাবে না।

অবশ্য প্রক্টরিয়াল বিধিমালার এসব ধারার চর্চা বিরল। নিয়মিতই ক্যাম্পাসে নানা আন্দোলন হয়। অনেক সময় তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তেই শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করেন। কখনো কখনো একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানাদির আয়োজন করতেও অনুমতি দেওয়ার প্রবণতা কম দেখা যায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক সহসভাপতি (ভিপি) নুরুল হক বলেন, ‘ভাষা আন্দোলন, গণ–অভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধসহ জাতির বিভিন্ন সংকটের মুহূর্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যদি আন্দোলন না করতেন, তাহলে আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ হতো না। বাংলাদেশের সংবিধানে যেখানে চিন্তা-বিবেকের স্বাধীনতা ও সংগঠন করার স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে, সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি প্রতিষ্ঠানের প্রক্টরিয়াল আইনে এমন বিধি থাকা গ্রহণযোগ্য নয়। আসলে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতার ভূত আমরা এখনো বয়ে বেড়াচ্ছি।’

নুরুল মনে করেন, প্রয়োগ নেই, তবে এ বিধিমালার অপব্যবহার হওয়ার সুযোগ রয়েছে। তাই বিধিটি সংশোধন করা দরকার।

৫ টাকা জরিমানা

প্রক্টরিয়াল বিধিতে শিক্ষার্থীরা নিয়ম না মানলে দুই ধরনের শাস্তির কথা বলা আছে। প্রক্টর ২৫ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করতে পারেন। যদি প্রক্টর মনে করেন এ জরিমানা যথেষ্ট নয়, সে ক্ষেত্রে ওই শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার করতে পারবেন তিনি।

শৃঙ্খলা লঙ্ঘন কিংবা অসদাচরণের জন্য সহকারী প্রক্টররা শিক্ষার্থীকে সর্বোচ্চ পাঁচ টাকা জরিমানা করতে পারেন।

ডাকসুর সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, প্রক্টরিয়াল বিধিতে হাস্যকর কিছু নিয়ম আছে। সেগুলো সংশোধন করে এ বিধিমালাকে গণতান্ত্রিক ও শিক্ষার্থীবান্ধব করা উচিত।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.