The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
বৃহস্পতিবার, ২৮শে মার্চ, ২০২৪

আগামী ২০ দিনের মধ্যে তথ্য দিতে পুলিশকে নির্দেশ

তথ্য অধিকার আইনে বাংলাদেশ পুলিশের কাছে চাওয়া তথ্য আগামী ২০ দিনের মধ্যে আবেদনকারীকে সরবরাহের আদেশ দিয়েছে তথ্য কমিশন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলাসংক্রান্ত পরিসংখ্যান চেয়ে বাংলাদেশ পুলিশের বিরুদ্ধে করা অভিযোগের বিষয়ে আজ মঙ্গলবার এ আদেশ দেয় তথ্য কমিশন।

দেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মোট কত মামলা, কত আসামি এবং কতজন গ্রেপ্তার হয়েছেন, তা জানতে বাংলাদেশ পুলিশের কাছে আবেদন করেছিলেন মানবাধিকারকর্মী সাদ হাম্মাদি। এসব তথ্য প্রকাশ পেলে আইনের প্রয়োগ বাধাগ্রস্ত এবং জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে—এমন কারণ দেখিয়ে তথ্য দেয়নি পুলিশ।

পুলিশের কাছ থেকে তথ্য না পেয়ে আবেদনকারী সাদ হাম্মাদি অভিযোগ দায়ের করেন তথ্য কমিশনে। গত ১১ জানুয়ারি এই অভিযোগের শুনানি করে কমিশন। দুই পক্ষের বক্তব্য শুনে ২ ফেব্রুয়ারি আদেশের দিন ধার্য করে কমিশন। তবে ২ ফেব্রুয়ারি আদেশ দেওয়া হয়নি। সেদিন আবেদনকারীকে মেইলে জানানো হয়, অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির কারণে আদেশের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। ২২ ফেব্রুয়ারি আদেশের তারিখ দেওয়া হয়।

২২ ফেব্রুয়ারির শুনানিতে তথ্য কমিশন আবেদনকারীর পরিচয় ও নাগরিকত্ব নিশ্চিত করে পুলিশকে লিখিত প্রতিবেদন কমিশনে জমা দিতে বলেন। পরবর্তী ১০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে কমিশন জানায়, ৮ মার্চ আদেশ দেওয়া হবে।

আজ কমিশনের অনলাইন কার্যক্রমে প্রধান তথ্য কমিশনার মরতুজা আহমদ বলেন, ‘অভিযোগকারী ও অপর পক্ষের বক্তব্য একাধিকবার শুনেছি। অভিযোগকারীর পরিচয় জানতে চেয়ে পুলিশের কাছে প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছিল, সেটাও পাওয়া গেছে। দুই পক্ষের বক্তব্য পর্যালোচনা করে কমিশন মনে করছে, অভিযোগকারী যেসব তথ্য চেয়েছেন, সেগুলো তথ্য অধিকার আইনে প্রদানযোগ্য।’

মরতুজা আহমদ আরও বলেন, পুলিশ কর্তৃপক্ষকে যথানিয়মে আগামী ২০ দিনের মধ্যে আবেদনকারীর চাওয়া তথ্য দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হলো।

কমিশনের অনলাইন কার্যক্রমে হাম্মাদি নিজে এবং বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষে আইনজীবী তাইফুল সিরাজ অংশ নেন।

আদেশের বিষয়ে সাদ হাম্মাদি প্রথম আলোকে বলেন, ‘যদিও আমার তথ্য আবেদনের পর নয় মাস অতিবাহিত হয়ে গেছে, আমি সন্তুষ্ট যে তথ্য কমিশন আমার অধিকারের পক্ষে সিদ্ধান্ত দিয়েছে। শুনানির শুরু থেকেই রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী যে রাষ্ট্রবিরোধিতার তকমা বা সন্দেহ আমার বিপক্ষে উপস্থাপন করেছেন শুধু তথ্য চাওয়ার জন্য, তাতে যেকোনো ব্যক্তি হয়রানি বোধ করবেন।’

সাদ হাম্মাদি আরও বলেন, তথ্য কমিশনের এই রায় জনগণ ও গণমাধ্যমকর্মীদের তথ্য অধিকার নিশ্চিত করতে একটি দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে এবং সেই সঙ্গে রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোকেও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে একটি পরিষ্কার বার্তা দিয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, পুলিশ কর্তৃপক্ষ এই তথ্য দিতে আর কোনো বাধা সৃষ্টি করবে না।

পুলিশের পক্ষে অংশ নেওয়া আইনজীবী তাইফুল সিরাজ প্রথম আলোকে বলেন, কমিশন আবেদনকারীর চাওয়া তথ্য সরবরাহ করতে পুলিশ সদর দপ্তরকে আদেশ দিয়েছে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

লেখক, গবেষক ও মানবাধিকারকর্মী সাদ হাম্মাদি ২০২১ সালের ৭ জুন পুলিশ সদর দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের পর থেকে এই আইনে প্রতিবছর দায়ের করা মামলার সংখ্যা, অভিযুক্ত ও গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের সংখ্যা তিনি জানতে চান। তথ্য না পাওয়ায় তিনি গত ১৮ জুলাই পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বরাবর আপিল আবেদন করেন। নির্ধারিত সময়ে আপিল আবেদনের জবাব না পাওয়ায় সাদ হাম্মাদি গত ১০ আগস্ট তথ্য কমিশনে অভিযোগ করেন।

সাদ হাম্মাদির তথ্য চেয়ে করা আবেদন খারিজ করে তাঁকে একটি চিঠি দেয় পুলিশ। চিঠিতে বলা হয়, তথ্য অধিকার আইনের ধারা ৭-এর চ, ছ এবং ড উপধারা অনুযায়ী আবেদনকারীর তথ্য প্রকাশ করার মতো নয়। এসব তথ্য প্রকাশ পেলে আইনের প্রয়োগ বাধাগ্রস্ত হতে পারে, অপরাধ বৃদ্ধি পেতে পারে, জনগণের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে, বিচারাধীন মামলার সুষ্ঠু বিচারকার্য ব্যাহত হতে পারে, কোনো অপরাধের তদন্তপ্রক্রিয়া এবং অপরাধীর গ্রেপ্তার ও শাস্তিকে প্রভাবিত করতে পারে।

বাংলাদেশের নাগরিক সাদ হাম্মাদি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়া আঞ্চলিক অফিসে (শ্রীলঙ্কা) কর্মরত।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.

  1. প্রচ্ছদ
  2. অপরাধ ও শৃঙ্খলা
  3. আগামী ২০ দিনের মধ্যে তথ্য দিতে পুলিশকে নির্দেশ

আগামী ২০ দিনের মধ্যে তথ্য দিতে পুলিশকে নির্দেশ

তথ্য অধিকার আইনে বাংলাদেশ পুলিশের কাছে চাওয়া তথ্য আগামী ২০ দিনের মধ্যে আবেদনকারীকে সরবরাহের আদেশ দিয়েছে তথ্য কমিশন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলাসংক্রান্ত পরিসংখ্যান চেয়ে বাংলাদেশ পুলিশের বিরুদ্ধে করা অভিযোগের বিষয়ে আজ মঙ্গলবার এ আদেশ দেয় তথ্য কমিশন।

দেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মোট কত মামলা, কত আসামি এবং কতজন গ্রেপ্তার হয়েছেন, তা জানতে বাংলাদেশ পুলিশের কাছে আবেদন করেছিলেন মানবাধিকারকর্মী সাদ হাম্মাদি। এসব তথ্য প্রকাশ পেলে আইনের প্রয়োগ বাধাগ্রস্ত এবং জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে—এমন কারণ দেখিয়ে তথ্য দেয়নি পুলিশ।

পুলিশের কাছ থেকে তথ্য না পেয়ে আবেদনকারী সাদ হাম্মাদি অভিযোগ দায়ের করেন তথ্য কমিশনে। গত ১১ জানুয়ারি এই অভিযোগের শুনানি করে কমিশন। দুই পক্ষের বক্তব্য শুনে ২ ফেব্রুয়ারি আদেশের দিন ধার্য করে কমিশন। তবে ২ ফেব্রুয়ারি আদেশ দেওয়া হয়নি। সেদিন আবেদনকারীকে মেইলে জানানো হয়, অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির কারণে আদেশের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। ২২ ফেব্রুয়ারি আদেশের তারিখ দেওয়া হয়।

২২ ফেব্রুয়ারির শুনানিতে তথ্য কমিশন আবেদনকারীর পরিচয় ও নাগরিকত্ব নিশ্চিত করে পুলিশকে লিখিত প্রতিবেদন কমিশনে জমা দিতে বলেন। পরবর্তী ১০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে কমিশন জানায়, ৮ মার্চ আদেশ দেওয়া হবে।

আজ কমিশনের অনলাইন কার্যক্রমে প্রধান তথ্য কমিশনার মরতুজা আহমদ বলেন, ‘অভিযোগকারী ও অপর পক্ষের বক্তব্য একাধিকবার শুনেছি। অভিযোগকারীর পরিচয় জানতে চেয়ে পুলিশের কাছে প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছিল, সেটাও পাওয়া গেছে। দুই পক্ষের বক্তব্য পর্যালোচনা করে কমিশন মনে করছে, অভিযোগকারী যেসব তথ্য চেয়েছেন, সেগুলো তথ্য অধিকার আইনে প্রদানযোগ্য।’

মরতুজা আহমদ আরও বলেন, পুলিশ কর্তৃপক্ষকে যথানিয়মে আগামী ২০ দিনের মধ্যে আবেদনকারীর চাওয়া তথ্য দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হলো।

কমিশনের অনলাইন কার্যক্রমে হাম্মাদি নিজে এবং বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষে আইনজীবী তাইফুল সিরাজ অংশ নেন।

আদেশের বিষয়ে সাদ হাম্মাদি প্রথম আলোকে বলেন, ‘যদিও আমার তথ্য আবেদনের পর নয় মাস অতিবাহিত হয়ে গেছে, আমি সন্তুষ্ট যে তথ্য কমিশন আমার অধিকারের পক্ষে সিদ্ধান্ত দিয়েছে। শুনানির শুরু থেকেই রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী যে রাষ্ট্রবিরোধিতার তকমা বা সন্দেহ আমার বিপক্ষে উপস্থাপন করেছেন শুধু তথ্য চাওয়ার জন্য, তাতে যেকোনো ব্যক্তি হয়রানি বোধ করবেন।’

সাদ হাম্মাদি আরও বলেন, তথ্য কমিশনের এই রায় জনগণ ও গণমাধ্যমকর্মীদের তথ্য অধিকার নিশ্চিত করতে একটি দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে এবং সেই সঙ্গে রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোকেও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে একটি পরিষ্কার বার্তা দিয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, পুলিশ কর্তৃপক্ষ এই তথ্য দিতে আর কোনো বাধা সৃষ্টি করবে না।

পুলিশের পক্ষে অংশ নেওয়া আইনজীবী তাইফুল সিরাজ প্রথম আলোকে বলেন, কমিশন আবেদনকারীর চাওয়া তথ্য সরবরাহ করতে পুলিশ সদর দপ্তরকে আদেশ দিয়েছে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

লেখক, গবেষক ও মানবাধিকারকর্মী সাদ হাম্মাদি ২০২১ সালের ৭ জুন পুলিশ সদর দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের পর থেকে এই আইনে প্রতিবছর দায়ের করা মামলার সংখ্যা, অভিযুক্ত ও গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের সংখ্যা তিনি জানতে চান। তথ্য না পাওয়ায় তিনি গত ১৮ জুলাই পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বরাবর আপিল আবেদন করেন। নির্ধারিত সময়ে আপিল আবেদনের জবাব না পাওয়ায় সাদ হাম্মাদি গত ১০ আগস্ট তথ্য কমিশনে অভিযোগ করেন।

সাদ হাম্মাদির তথ্য চেয়ে করা আবেদন খারিজ করে তাঁকে একটি চিঠি দেয় পুলিশ। চিঠিতে বলা হয়, তথ্য অধিকার আইনের ধারা ৭-এর চ, ছ এবং ড উপধারা অনুযায়ী আবেদনকারীর তথ্য প্রকাশ করার মতো নয়। এসব তথ্য প্রকাশ পেলে আইনের প্রয়োগ বাধাগ্রস্ত হতে পারে, অপরাধ বৃদ্ধি পেতে পারে, জনগণের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে, বিচারাধীন মামলার সুষ্ঠু বিচারকার্য ব্যাহত হতে পারে, কোনো অপরাধের তদন্তপ্রক্রিয়া এবং অপরাধীর গ্রেপ্তার ও শাস্তিকে প্রভাবিত করতে পারে।

বাংলাদেশের নাগরিক সাদ হাম্মাদি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়া আঞ্চলিক অফিসে (শ্রীলঙ্কা) কর্মরত।

পাঠকের পছন্দ

মন্তব্য করুন