মাত্র ২ ফুট ৬ ইঞ্চি উচ্চতার ২০ বছর বয়স্ক জিহাদ হাসান একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা, সমাজের অসহযোগীতা, মানুষের কটুকথা কোন কিছুই তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে পাশ কাটিয়ে দেশের সবচেয়ে কম উচ্চতার উচ্চ শিক্ষিত মানুষ জিহান এখন পড়ছেন কুষ্টিয়ার ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে।
অদম্য মনোবল আর মেধার জোরে জিহাদ জয় করেছেন তার আকৃতির দৈণ্যতাকে। অদম্য এই জিহাদ বর্তমানে ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী। এর আগে তিনি ঢাকা বোর্ড থেকে ২০১৮ সালে ৪ দশমিক ৮৭ জিপিএ নিয়ে এসএসসি এবং ২০২০ সালে ৪.২৫ জিপিএ নিয়ে এইচএসসি পাস করেন।
এ পর্যন্ত আসতে ছোট বেলা থেকে অনেক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখিন হতে হয়েছে জিহাদকে। জিহাদ বলেন, যেহেতু আমি সমাজের আর দশটা ছেলের মতো স্বাভাবিক না ফলে অনেকের কাছ থেকে নেগেটিভ কথা শুনতে হয়েছে কিন্তু কোন কিছুকে কানে না নিয়ে একসময় এসএসসি, এইচএসসি এবং সর্বশেষ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছি, আলহামদুলিল্লাহ।
পটুয়াখালির জেলার দুমকি উপজেলার পাঙ্গাসিয়া গ্রামের ফারুক হাসান কাজী ও রেহানা আক্তারের ছেলে জিহাদ। এই দম্পতির দুই ছেলে মেয়ের মধ্যে জিহাদ হাসান ছোট। ২০০২ সালে জন্ম হলেও স্বাভাবিক বৃদ্ধি থমকে যায় তার বয়স যখন তিন বছর। একাধিকবার টায়ফাইডে আক্রান্ত হওয়াই হাত, পা ও ঘাড় বেকে যায় জিহাদের। প্রায় তিন বছর বিভিন্ন ডাক্তার দেখিয়েও কোন ফল হয়নি। স্বাভাবিক বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায় জিহাদের। তবুও ছেলেকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে ভুলে যাননি এই মা। ছায়ার মতো ছেলের পাশে থেকে চালিয়ে যাচ্ছেন জীবন সংগ্রাম।
জিহাদের মা রেহানা আক্তার বলেন, ছোট বেলা থেকে ছেলের পড়ালেখার প্রতি খুব আগ্রহ ছিলো। আমি তাকে সাধ্যমত সাহায্য করেছে, উৎসাহ প্রদান করতাম। তার পড়ালেখা নিয়ে অনেক লোকের অনেক কথা শুনতে হয়েছে কিন্তু সে গুলোতে আমি কখনো পাত্তা দেইনি। মানুষের কটু কথায় ছেলে যখন মন খারাপ করে চুপ করে থাকতো তখন আমি তাক সান্তনা দিয়েছে, বুঝিয়েছি। বলেছি তুমি যেদিন লেখা পড়া করে মানুষের মতে মানুষ হবা তখন তোমার এই সীমাবদ্ধতাকে কেউ মনেই রাখবে না। তোমার জীবন তোমাকেই গড়তে হবে।
জীবন চলার পথে শারীরিক এই প্রতিবন্ধকতার জন্য নানা জনের হাসির পাত্র হয়েছেন অসংখ্যবার তবুও থেমে থাকেননি জিহাদ। তার এমন সাফল্য ও সাহসিকতা দেখে উৎসাহিত তার বন্ধু ও সহপাঠিরা।
পরিবারকে সহযোগীতা ও নিজের খরচ চালাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার পাশাপাশি একটি কোচিং সেন্টারে শিক্ষাকতা করেন জিহাদ। কোচিং এর শিক্ষার্থীরাও তার শিক্ষাদান পদ্ধতির উপর সন্তুষ্ঠ ও অনুগত।
ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ রশিদুজ্জামান বলেন ছাত্র হিসাবে জিহাদ অন্যাণ্য ছাত্রের মতোই মেধাবী। একজন শারীরিক প্রতিবন্ধি হওয়া সত্ত্বেও পড়ালেখার প্রতি তার যে উৎসাহ তা প্রসংসার যোগ্য, সেই সাথে জিহাদের সফলতাও কামনা করেন তিনি।