‘তিন বছরের ছোট্ট একটা মেয়ে রয়েছে সাইফুলের। অন্যদিকে তার স্ত্রী ইসরাত জাহান তারিন চারমাসের অন্তঃসত্ত্বা। এখন বাচ্চা মেয়েটার কি হবে? আমার পরিবার তো শেষ হয়ে গেলো। অনাগত সন্তানের মুখ দেখা হলো না আমার ভাইয়ের।’ এভাবেই বিলাপ করছিলেন সাইফুলের বোন জান্নাত আরা।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, সাত ভাইবোনের মধ্যে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ চতুর্থ। বিয়ে করেছেন বছর কয়েক আগে। সদ্য সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে নিযুক্ত হন তিনি।
ভাইয়ের আহত হওয়ার খবর শুনার পর মেডিকেল পড়ুয়া মেয়েকে জান্নাত আরা বলেন,‘আসরের সময় একজন খবর দিয়েছে সাইফুলের যেন কি হয়েছে। আমার মেয়েটা মেডিকেলে পড়ে। আমি ওকে ফোন দিয়ে বলি যে, তোমার মামার কি হইছে একটু দেখতে যাও তো। পরে মেয়ে আমাকে বলে মা, মামা তো আর নেই। হাসপাতালে ছুটে এসে দেখি আমার আদরের ভাইটা আর নেই।’
স্থানীয়রা জানায়, সাইফুলের তিন বছরের একটি কন্যা রয়েছে। দুনিয়ার অনেক কিছু তার এখনো অজানা। বাবার ভালোবাসা কী-তা বুঝে উঠার আগেই হারিয়ে ফেললো বাবাকে। আজ থেকে আর কখনো দেখতে পাবে না বাবাকে, হবে না বাবা-মেয়ের আলিঙ্গনও। চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ইসরাত জাহান তারিনও হয়ে পড়লেন স্বামীহারা। বছর কয়েক আগে বিয়ে হলেও এখন সেও হয়ে গেল বিধবা। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে দিশেহারা ইসরাত জাহান।
প্রতিবেশীরা বলেন, স্বামী হারানোর খবর পাওয়ার পর থেকে অঝোরে কাঁদছে তাদের পরিবারের সবাই। অথচ মাস কয়েক আগে সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর নিযুক্ত হয়েছিল সাইফুল ইসলাম। এটিকে ঘিরে আনন্দ-উচ্ছ্বাস ছিল তাদের পরিবারের মধ্যে। কিন্তু এক মুহূর্তেই নিঃশেষ হয়ে গেলো সবকিছু। পুরো পরিবারের সামনে এখন ঘোর অন্ধকার।
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘ইসকনের চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে কারাগারে পাঠানোকে কেন্দ্র করে তার লোকজন তিন-চার ঘণ্টা প্রিজনভ্যান আটকে রেখেছিল। পরে তাদের সরিয়ে দিয়ে তাকে যখন কারাগারে নেওয়া হলো, তারা আদালত ভবনে ওঠার পথে পুরাতন বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে আমাদের একজন শিক্ষানবীশ আইনজীবীর ওপর আক্রমণ করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ওই আইনজীবী একটু অসুস্থ ছিলেন। তিনি হেঁটে বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনের সামনে থেকে মুসলিম হাইস্কুলের দিকে পার হচ্ছিলেন। তখন তাকে টেনেহিঁচড়ে রঙ্গম হলের সামনে নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এটা একটা নৃশংস হত্যাকাণ্ড। আমরা এ ঘটনার বিচার দাবি করছি।’