The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
বৃহস্পতিবার, ২৬শে ডিসেম্বর, ২০২৪

সংকট সমাধানে দ্রুত সিদ্ধান্ত চান শিক্ষার্থীরা

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশন এখনো চলছে। গতকাল সোমবার রাত ১১টায় অনশনের ১২৮ ঘণ্টা পেরোলেও সংকট থেকে বেরিয়ে আসার কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। এ পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক–শিক্ষার্থী সবাই এ বিষয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ের দ্রুত সিদ্ধান্ত দেখতে চাইছেন।

এদিকে এ আন্দোলনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর বাইরে তৃতীয় একটি পক্ষ ‘ফায়দা হাসিলের অপচেষ্টায়’ লিপ্ত আছে বলে ধারণা প্রকাশ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।

অন্যান্য দিনের মতো গতকালও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন। বিকেল সাড়ে পাঁচটায় ক্যাম্পাসে ‘আহ্বান মিছিল’ কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা। কর্মসূচি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সিলেটে এসে আন্দোলনে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। পরে ছয়টার দিকে আন্দোলনকারীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গিয়ে অনশনকারীদের পাশে অবস্থান নেন।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, শনিবার রাতে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সঙ্গে তাঁদের যে ভার্চ্যুয়াল বৈঠক হয়, সেখানে সংকট থেকে উত্তরণের আভাস পাওয়া যায়নি। পরদিন দুপুরে আবার ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে বসার কথা ছিল। এরপর থেকে তাঁরা সে বৈঠকের অপেক্ষায় থাকলেও গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো সাড়া পাননি। বৈঠক আদৌ হবে কি না, এ নিয়েই সংশয় দেখা দিয়েছে।

আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী শিক্ষার্থীদের একজন সাদিয়া আফরিন বলেন, ‘অনশনকারীরা ক্লান্ত-বিধ্বস্ত-অসুস্থ। তাঁদের অবস্থা মৃত্যুপথযাত্রীর মতো। এরপরও উপাচার্যের পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা একচুল সরবেন না। তবে আমরা এখনো আলোচনার জন্য প্রস্তুত।’

শনিবার দিবাগত রাতে ভার্চ্যুয়াল বৈঠক আয়োজনে শিক্ষামন্ত্রী যে প্রতিনিধিদলকে শাবিপ্রবিতে পাঠিয়েছিলেন, এর অন্যতম সদস্য সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। এর মধ্যেই তাঁরা গত রোববার বিকেলে উপাচার্যের বাসভবনের বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন। এটা খুবই অমানবিক কাজ। এমন সহিংসতা পরিহার করার জন্য আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করছি। আর ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষার্থীদের লিখিতভাবে তাঁদের দাবিগুলো উপস্থাপন করতে বলেছিলেন। সেটা শিক্ষার্থীরা এখনো না দেওয়ায় পুনরায় আলোচনা হয়নি। তবে আমরা বিশ্বাস রাখি, আলোচনার মাধ্যমেই এ সমস্যা কেটে যাবে।’

অনশন ভাঙানোর ব্যর্থ চেষ্টা

গতকাল সন্ধ্যা ছয়টার কিছু আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আলমগীর কবিরের নেতৃত্বে কয়েকজন শিক্ষক আমরণ অনশনকারীদের জন্য খাবার নিয়ে গেলে শিক্ষার্থীরা তা প্রত্যাখ্যান করেন। পরে শিক্ষকেরা উপাচার্যের বাসভবনে যেতে চাইলে শিক্ষার্থীরা ভেতরে ঢুকতে বাধা দেন। যেতে না পেরে প্রক্টর আলমগীর কবির গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, উপাচার্যের বাসভবনের বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন করায় ও কাউকে যাতায়াতের সুযোগ না দেওয়ায় সেখানে উপাচার্যের পরিবার ও শিক্ষক-কর্মচারীসহ ১৫ জন আটকে পড়েছেন।

প্রক্টর বলেন, হৃদ্‌রোগের সমস্যার কারণে উপাচার্যকে নিয়মিত ওষুধ সেবন করতে হয়। তাঁর ওষুধ ও খাবার শেষ হয়ে পড়ায় তাঁরা সেসব দ্রব্য বাসভবনে পৌঁছে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বাধায় সেসব পৌঁছাতে পারেননি।

‘সমাধান এখন আমাদের হাতে নেই’

শাবিপ্রবির বর্তমান অচলাবস্থা এবং এ থেকে উত্তরণ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ মো. আনোয়ারুল ইসলাম গতকাল বিকেলে বলেন, ‘আমরা শিক্ষকেরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বোঝাতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছি। শুরুতে তাদের যে তিন দফা দাবি ছিল, সেসবও উপাচার্য মহোদয় মেনে নিয়ে সমাধানের আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু কী থেকে কী হয়ে গেল! এখন আর সমাধান আমাদের হাতে নেই। তবে শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। নিশ্চয়ই আলোচনার মাধ্যমে এ সংকট কেটে যাবে।’

এদিকে শাবিপ্রবির কয়েকজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে উপাচার্য সম্পর্কে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টিভঙ্গি বিষয়ে একটা ধারণা পাওয়া গেছে। তাঁরা জানিয়েছেন, ২০১৭ সালের ১৭ আগস্ট প্রথমবারের মতো ফরিদ উদ্দিন আহমেদ উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান। এরপর গত বছরের ৩০ জুন দ্বিতীয়বারের মতো নিয়োগ পান তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠেনি। ফলে তিনি সরকারের ‘গুডবুকে’ আছেন। তবে চলমান আন্দোলনে শেষ পর্যন্ত কী দাঁড়ায়, এ নিয়ে কারও সুস্পষ্ট ধারণা নেই।

তৃতীয় পক্ষের ফায়দা হাসিলের অপচেষ্টার অভিযোগ

প্রতিবেদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জানান, শাবিপ্রবির চলমান আন্দোলনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর বাইরে তৃতীয় একটি পক্ষ ‘ফায়দা হাসিল করার অপচেষ্টায়’ লিপ্ত আছে বলে মনে করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষার সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে তারা।

গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানান ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মো. রহমত উল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া।

বিবৃতিতে বলা হয়, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। চলমান পরিস্থিতিতে রোববার আন্দোলনকারীরা হঠাৎ করেই উপাচার্যের বাসভবনের পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছেন। এটি অমানবিক এবং তা শিক্ষাঙ্গনের আন্দোলনে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত মাত্রা যুক্ত করেছে। শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে যেকোনো সমস্যা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করাই বাঞ্ছনীয়। বিভিন্ন গণমাধ্যমে আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে যে ধরনের তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপিত হয়েছে, তা থেকে প্রতীয়মান হয়, একটি বিশেষ মহল এ আন্দোলনকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপান্তরের অপচেষ্টা করছে।

বিভিন্ন সংগঠনের কর্মসূচি

শাবিপ্রবির উপাচার্যকে অপসারণ করে চলমান সংকট নিরসনের আহ্বান জানিয়ে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে গতকাল বিকেলে সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ‘সিলেটের নাগরিকবৃন্দ’ ব্যানারে আয়োজিত এ কর্মসূচি বিভিন্ন শ্রেণি–পেশা ও রাজনৈতিক সংগঠনের প্রতিনিধি এবং বিশিষ্ট নাগরিক অংশ নেন। এ ছাড়া সরকারকে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে গতকাল গণমাধ্যমে এক বিবৃতি পাঠিয়েছে গণতন্ত্রী পার্টি সিলেট জেলা ও মহানগর শাখা।

তদন্তের দাবি আনু মুহাম্মদের

প্রতিবেদক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় জানান, সব উপাচার্য পদত্যাগ করলে, তাঁদের বিরুদ্ধে সরকারি তদন্তের দাবি জানিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেছেন, ‘শাহজালালের উপাচার্যের পদত্যাগের বিষয়ে অন্য উপাচার্যরা পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যদি বিষয়টি সঠিক হয়, তাহলে সেটি আমাদের জন্য ভালো খবর। সরকারের উচিত হবে, উপাচার্যরা পদত্যাগ করার পরপর একটি তদন্ত কমিটি করা। তদন্তের মাধ্যমে তারা কী করেছে, তা জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে।’

শাবিপ্রবির আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে গতকাল দুপুর ১২টা থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে প্রতীকী অনশন করেন বিভিন্ন সরকারি–বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে আনু মুহাম্মদ এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা এসেছি শিক্ষকসমাজের বড় কলঙ্ক থেকে বাঁচতে। ব্যক্তিস্বার্থ রক্ষায় সিলেটে যে ঘটনা ঘটেছে, তা এখন গোটা শিক্ষক সমাজের সম্মান রক্ষায় চ্যালেঞ্জ হয়ে পড়েছে। এর মূল কারণ, কীভাবে উপাচার্য নিয়োগ হচ্ছেন, তা আমরা সবাই জানি।’

কর্মসূচির আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। এ সময় ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হকের নেতৃত্বে তাঁর সংগঠন গণ অধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ ছাত্র জোট ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সমন্বয়ে প্রগতিশীল ছাত্র জোটের ব্যানারে একটি মিছিল এসে কর্মসূচিতে সংহতি জানায়।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ১২ দিন ধরেই উত্তাল শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়। আন্দোলনের প্রথম দিকে দাবি পূরণ না হওয়ায় গত বুধবার বেলা তিনটা থেকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আমরণ অনশনে বসেন ২৪ শিক্ষার্থী। তাঁদের একজনের বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ায় বাড়ি চলে গেছেন তিনি। অসুস্থ হয়ে ১৫ জন এখন হাসপাতালে ভর্তি। অপর আটজনের শরীরে স্যালাইন পুশ করেছেন চিকিৎসকেরা। আমরণ অনশনের পাশাপাশি গত শনিবার রাত ৮টা থেকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা শুরু করেছেন গণ-অনশন।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.