বাচ্চা একদম খেতে চায় না, খাওয়া নিয়ে খুব সমস্যা করে—এমন অভিযোগ প্রায় প্রত্যেক মায়ের। বিশেষত ছয় মাস বয়সী থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে খেতে না চাওয়ার প্রবণতা বেশি লক্ষ করা যায়।
সমস্যাটি কীভাবে সমাধান করবেন? আপনার ছোট্ট সোনামনিকে কিভাবে খাওয়াবেন সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ডা. মো ফরিদ উদ্দিন, এমবিবিএস (ঢাবি), সিসিডি (BIRDEM), এম এস সি (UK), ফেলোশিপ ট্রেনিং ডায়াবেটিস – সিএমসি হাসপাতাল, চেন্নাই, ভারত।
১) ৬ মাস বয়স পর্যন্ত শুধুমাত্র বুকের দুধ। আলাদা এমনকি পানিরও প্রয়োজন নেই।
২) ৬ মাস বয়স পূর্ণ হয়ে ৭ মাসে পরলে বুকের দুধ এর পাশাপাশি ৩ বেলা বাচ্চাকে বাড়তি খাবার দিতে হবে।চাল, ডাল, সবজি, মাছ, মাংস ও তেল দিয়ে খিচুড়ি, ডিমের কুসুম, ফল (কলা/আপেল/পাকা পেঁপে/মৌসুমি ফল চটকে)।
৩) প্রথমে ২ বা ৩ চামচ করে একদম মিহি করে (দই এর মত থকথকে হবে, সুপ এর মত পাতলা না। ব্লেন্ডার ব্যবহার করা যাবে না। ডাল ঘুটুনি বা চামচ দিয়ে মিহি করতে হবে।) শুরু করতে হবে। তারপর আস্তে আস্তে বাড়িয়ে প্রতিবেলা ১/৪ কাপ (৬৫- ৭০ মিলি) করে ৩ বেলা দিতে হবে।
সব খাবার একবারে না, একটা একটা করে যোগ করতে হবে একেক সপ্তাহে..
যেমন-
প্রথম সপ্তাহ= চাল + ডাল অথবা = চাল + একটা সবজি
এরপরের সপ্তাহ= চাল + ডাল + একটা সবজি,
তারপর= চাল + ডাল + একটা সবজি + মুরগির মাংস এভাবে।
যেকোনো নতুন খাবার শুরু করে ২ / ৩ দিন পর্যবেক্ষণ করতে হবে, কোন পাতলা পায়খানা/ এলার্জি হয় কিনা, যদি হয় তাহলে ওই খাবারটি বন্ধ রাখতে হবে।
৪) ৯ মাস বয়স থেকে ১/২ কাপ (১২৫ মিলি) ভারী খাবার ৩ বেলা ও ২ বেলা হালকা নাস্তা দিতে হবে। ১ বছর বয়স থেকে ৩ বেলা ১ কাপ (২৫০ মিলি) ভারী খাবার ও দুই বেলা নাস্তা।
৫) ১ বছর বয়স পর্যন্ত প্রথমে বুকের দুধ খাইয়ে তারপর বাড়তি খাবার খাওয়াতে হবে, এক বছর বয়স থেকে প্রথমে বাড়তি খাবার, তারপর বুকের দুধ দিতে হবে।
>> ডিম এর সাদা অংশ, গরু +খাসির মাংস (রেড মিট), কলিজা, চর্বি যুক্ত খাবার ১ বছর বয়সের পর /গরুর দুধ ২ বছর বয়সের পর দিতে হবে।
>> বাচ্চার খাবার কখনও যেন শুধু চালের/গমের সুজি না হয়।
>> প্রতিদিন গাজর/মিষ্টিকুমড়া না দিয়ে সপ্তাহে ২ / ৩ দিন দিতে হবে নাহলে বাচ্চার রঙ হলদে হয়ে যায় (সিরিয়াসলি)।
>> বাচ্চার খাবার এ ১ বছর বয়স পর্যন্ত কোন আলাদা লবন/ চিনি/ মিছরি দেওয়া যাবে না।
>> প্রিজারভেটিভ ও রঙযুক্ত খাবার, ম্যাগী মসলা, নুডলস এর মসলা, কোলা জাতীয় খাবার, ফাস্টফুড দেওয়া যাবে না।
>> বাচ্চাকে সেরেল্যাক জাতীয় খাবার দিলে পরে ঘরের খাবার খেতে চায় না তাই না দেওয়াই ভাল।
৬) ১ বছর বয়স থেকে খাবার ব্লেন্ড না করে টেবিলে হাই চেয়ার সহ পরিবারের সবার সাথে বসিয়ে প্রতিদিন এর রান্না চটকে দিতে হবে। নাহলে পরে বাচ্চা শুধু ব্লেন্ড খাবার খেতে চায়। এমনকি প্রথমেও ব্লেন্ড না করলেই ভালো। ডাল ঘুটুনি দিয়ে মিশিয়ে নেওয়া ভালো।
বাচ্চাদের খাওয়ানোর সময় খাবারের নাম বলতে হবে, গন্ধ নিতে, ধরতে দিতে হবে। একটু মাখামাখি করবে, নোংরা করবে, মেনে নিতে হবে। টিভি, মোবাইল, কম্পিউটার দেখিয়ে কখনও বাচ্চাকে খাওয়ানো উচিত নয়।বাচ্চার পিছনে খাবার নিয়ে লেগে থাকা নয়, আধা ঘন্টার মধ্যে যা খায় শেষ করে দিতে হবে। প্রতি বেলা খাবারের মাঝে অন্তত ৩/৪ ঘন্টা ব্যবধান থাকতে হবে।
খাওয়া নিয়ে কখনো বকাবকি, মার দেওয়া, ঠুষে খাওয়ানো, গলার ভিতর দিয়ে দেওয়া / বাবা মা ঝগড়া করা, অন্য বাচ্চার সাথে তুলনা করে তার মত স্বাস্থ্যবান বানানোর চেষ্টা করা যাবে না। তাহলে বাচ্চা খাওয়াটা শাস্তি হিসাবে নিবে, আনন্দটা থাকবে না, খ্যানখেনে হয়ে যাবে। থাকুক না একটু হাল্কা পাতলা!