The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
বুধবার, ৩০শে অক্টোবর, ২০২৪

মিয়ানমার সীমান্ত পরিস্থিতি নিরাপত্তা পরিষদে বাংলাদেশকে সমর্থন দিতে চায় যুক্তরাজ্য

রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির লড়াইয়ের জেরে দুই দেশের সীমান্তের উদ্ভূত পরিস্থিতি নিরসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা চেয়েছে বাংলাদেশ। এরই ধারাবাহিকতায় যুক্তরাজ্য বলেছে, বাংলাদেশ বিষয়টি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপন করতে চাইলে দেশটি সহযোগিতা দিতে আগ্রহী।

গত মঙ্গলবার সীমান্ত পরিস্থিতি অবহিত করার জন্য বাংলাদেশে কর্মরত প্রায় ৩০টি দেশের কূটনীতিকদের রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ডাকা হয়েছিল। সেখানে যুক্তরাজ্য ওই প্রস্তাব দিয়েছে বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে। এর আগের দিন ঢাকায় কর্মরত দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার সহযোগিতা সংস্থা আসিয়ানের দেশগুলোর কূটনীতিকদেরও সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে অবহিত করা হয়েছিল। এই জোটে ১০টি দেশের মধ্যে মিয়ানমার থাকলেও বাংলাদেশ নেই। ওই সভায় ঢাকায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত উপস্থিত ছিলেন না।

মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে লড়াই চলছে। দেশটি থেকে ছোড়া মর্টারের গোলা বাংলাদেশ সীমান্তে এসে পড়ছে। এতে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে।

সীমান্তের বাসিন্দারের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে চারবার পররাষ্ট্র দপ্তরে তলব করা হয়েছে।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে কূটনীতিকদের অবহিত করেন ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম। এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলা মতবিনিময়ে বাংলাদেশ পরিস্থিতির উত্তরণে বিশ্বসম্প্রদায়ের সহযোগিতা চায়। সীমান্ত পরিস্থিতির শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য বাংলাদেশ বিষয়টি জাতিসংঘে তুলবে বলে উল্লেখ করে। তখন যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট ডিকসন বলেন, বাংলাদেশ বিষয়টি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপন করতে চাইলে স্থায়ী সদস্য হিসেবে সহযোগিতা করতে আগ্রহী যুক্তরাজ্য। প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তখন বলা হয়, নিরাপত্তা পরিষদে বাংলাদেশ যাবে কি না, তা নিয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে সাধারণ পরিষদের বিতর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত পরিস্থিতি গুরুত্ব পাবে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশের এক কূটনীতিক বলেন, নিরাপত্তা পরিষদে যেকোনো বিষয় দুভাবে উত্থাপন করা যেতে পারে। একটি হলো নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাব আকারে সেটি তুলে ধরা। আবার যেকোনো বিষয় নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে সাধারণ আলোচনারও সুযোগ রয়েছে। তবে দুটি ক্ষেত্রেই পরিষদের স্থায়ী পাঁচ সদস্যদেশের যে কেউ ভেটো দিলে তা নিয়ে এগোনোর কোনো সুযোগ থাকে না।

মঙ্গলবারের ওই মতবিনিময় সভায় উপস্থিত একাধিক কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, পশ্চিমা দেশের এক কূটনীতিক বলেন, আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর লড়াইয়ের জেরে বাংলাদেশে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে। এমন প্রেক্ষাপটে মানবিক সহায়তার জন্য তহবিল সংগ্রহ করা হলে বাংলাদেশ তা নেবে কি না। এ বিষয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের জানানো হয়, নতুন করে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের কোনো সুযোগ দেবে না। এ ব্যাপারে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত রয়েছে। ফলে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকে কেন্দ্র করে নতুন করে কোনো মানবিক সহায়তা নেবে না।

এরপর ওই কূটনীতিক প্রস্তাব দেন, বাংলাদেশ বান্দরবান থেকে লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার কথা বলেছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে মানবিক সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাব করেন পশ্চিমা ওই দেশের শীর্ষ কূটনীতিক। এমন প্রস্তাবের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়, এ মুহূর্তে বিপুলসংখ্যক লোকজনকে বান্দরবানের মিয়ানমারসংলগ্ন সীমান্ত থেকে সরিয়ে নেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই। খুব সীমিত সংখ্যক লোকজনকে স্বল্পতম সময়ের জন্য সরিয়ে নেওয়া হতে পারে। এমন এক পরিস্থিতিতে সরকার দেশের বাইরের কোনো মানবিক সহায়তা নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করছে না।

কূটনৈতিক একটি সূত্র জানায়, দুটি দেশের কূটনীতিক জানতে চান, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সীমান্তে শক্তি প্রদর্শনের পথে যাচ্ছে না কেন? কেন বাংলাদেশ শুধু কূটনীতির পথেই সমাধান খুঁজছে? এই প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ বলেছে, প্রতিবেশী তো বটেই, কারও সঙ্গেই কোনোরকম বৈরিতায় যাওয়ার নীতি বাংলাদেশ অনুসরণ করে না। তাই শান্তিপূর্ণ উপায়ে আলোচনার পথেই বাংলাদেশ সংকট নিরসনের জন্য কূটনীতিতে ভরসা রাখছে। শেষ পর্যন্ত কূটনীতি ব্যর্থ হলে অন্য বিকল্পের কথা ভাবা যাবে। তখন ওই দুই কূটনীতিকের একজন বলেন, বাংলাদেশ যখন কূটনৈতিক উদ্যোগ পুরোপুরি ব্যর্থ হওয়ার পর বিকল্প পথে যাওয়ার কথা ভাববে, সময় তখন বাংলাদেশের অনুকূলে থাকবে কি না? তখন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়, বাংলাদেশ শান্তিপূর্ণ উপায়ে এ সমস্যার পথ খুঁজবে।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অন্যতম সদস্যদেশ যুক্তরাজ্যের প্রস্তাবটি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক বলে মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মো. হুমায়ূন কবীর। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রস্তাব অনুযায়ী বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত পরিস্থিতির বিষয়টি নিরাপত্তা পরিষদে নেওয়ার আগে আমাদের যথেষ্ট পূর্বপ্রস্তুতি নিতে হবে। আমরা এর মাধ্যমে কী অর্জন করতে চাই, সেটা ঠিক করতে হবে। যথাযথ প্রস্তুতি নিয়ে এগোলেই আমরা এর সুফল পেতে পারি। আর যৌক্তিকভাবে বিষয়টি তুলে ধরতে না পারলে এতে কোনো ফল হবে না।’

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.