The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
সোমবার, ১১ই নভেম্বর, ২০২৪

ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে চলমান ছাত্রলীগের অপরাজনীতি 

মোঃ আশিকুর রহমান: সারাদেশে ছাত্রলীগ যেখানে গা ডাকা দিয়েছে সেখানে গত ০৭।১০।২০২৪ বিকেল চারটার দিকে নতুন জুনিয়র ব্যাচকে কেন্দ্র করে তাদের দুটি গ্রুপের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে সিসিটিভি ফুটেজে দেশীয় অস্ত্র ব্যাবহার করতে দেখা যায়।

ছাত্রলীগের গ্ৰুপগুলো ক্যাম্পাসে আসা নতুন ব্যাচের ছাত্রদের নিজেদের গ্ৰুপে আনাকে নিয়ে এ সংঘর্ষের সৃষ্টি । দুটি গ্রুপ হলোঃ ব্রাদারহুড ও ইউনিটি। এ ঘটনায় ইউনিটি গ্রুপ ব্রাদারহুডের উপর ব্যাপক চড়াও হয়ে তিনজনকে মারাত্মকভাবে আহত করে। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় একজন আরেকজনকে দেশীয় অস্ত্র ব্যবহার করে মাথায় আঘাত করছে। এতে দুজন গুরুতরভাবে আহত হয়। দুজন মাথায় ভীষণভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয় এবং একজনের হাতের হাড় পুরোপুরি ভেঙে যায়।

এ ঘটনায় ১২তম ব্যাচের ছাত্রলীগের পোস্টেড কয়েকজনের নাম পাওয়া যায় ইন্ধনদাতা হিসেবে। তারা হলোঃ ১২তম ব্যাচের সাইফুল, ইরফান, বৃন্ত, ফারিদ, শান্ত, প্রমি, শীন, শুভ, শ্রেষ্ঠ, ঋদ্ধি বড়ুয়া, লিমন, জয় বিশ্বাস, সুজন প্রমুখদের ইন্ধনে এ ঘটনা ঘটেছে। এরা দীর্ঘদিন সদ্য বিদায়ী সরকারের আমল থেকেই ক্যাম্পাসে বিভিন্ন অরাজকতা করে আসছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো, শিক্ষকদের সাথে বিভিন্ন সময় তাদের নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য অপমানজনক অবস্থা সৃষ্টি, হলে রুম দখল, সিট বাণিজ্য, ক্যাম্পাসে গাছ কেটে বিক্রি করে ফেলা, বাজেটে সিন্ডিকেট করা, ডাইনিংয়ের অর্থ আত্মসাৎ, ক্যাম্পাসের সার্বিক উন্নতিতে বিভিন্নভাবে হস্তক্ষেপ করা ইত্যাদি।

এবিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষক বলেন, এদের অপকর্মের কারণে আমরা বিভিন্নভাবে অপমানিত-অপদস্ত হয়েছি বিভিন্নসময়। ইনকোর্স পরীক্ষার নাম্বার বাড়িয়ে দেওয়া বা ক্লাসে উপস্থিত না থেকেও উপস্থিতির জন্য আমাদের সাথে খারাপ আচরণ করে আসছে গ্রুপ দুটির নেতৃত্বে থাকা গুন্ডারা। আমরা অতিষ্ট। ক্যাম্পাসে পড়াশোনার পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ক্যাম্পাসের মান নষ্ট হচ্ছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিভিন্নভাবে হেনস্তার শিকার হচ্ছে। এই ঘটনায় তদন্তের মাধ্যমে দ্রুত সময়ের মধ্যে এদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও বলেন তিনি।

আহত শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায় তাদের দুর্দশার কথা। যেন দেখার কেউ নেই। এডমিন প্রশাসনের বিরুদ্ধেও অভিযোগ তুলেছেন অনেকে। দীর্ঘদিন ধরে এত অপকর্ম হয়ে আসলেও ক্যাম্পাস এডমিনকে কোনও ধরনের পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় নি। এবিষয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করেন। এ ঘটনায় সরাসরি সম্পৃক্ত ছিল মানিক সাহা(সিভিল ৯ম ব্যাচ), হাসিব(সিভিল ৯ম ব্যাচ), নিবির(সিভিল ৯ম ব্যাচ)। আহত শিক্ষার্থীরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। যেন এমন ঘটনা পরবর্তী আর না ঘটে।
মইক ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের গ্রুপ দুটি মহানগরের আহ্বায়ক নওশেল আহমেদ অনি এবং অপর গ্রুপটি মহানগরের যুগ্ম আহ্বায়ক রাহাতের নেতৃত্বে পরিচালিত হয়ে আসছিল। তবে ৫ই আগস্ট সরকার পতনের পর ছাত্রলীগ নতুন কলাকৌশল অবলম্বন করা শুরু করে।

প্রত্যক্ষদর্শী, আরিফ আহমেদ (৩২) জানায়, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসের বাইরে এসে এভাবে সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়া স্থানীয়দের মাঝে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। তিনি আরও বলেন, উচ্চ শিক্ষার জন্য পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের এমন আচরণে আমরা সত্যিই লজ্জিত। যারা দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা তারা কিনা দেশকে অরাজক পরিস্থিতির দিকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছেন। এর উপযুক্ত বিচার না হলে পরবর্তীকালে সমস্যা আরও প্রকট হবে বলেও তিনি মনে করেন।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে অধ্যয়নরত এক শিক্ষার্থী জানান, ছাত্রলীগের দুটি গ্রুপ দীর্ঘদিন ধরে তাদের স্বার্থ হাসিল করার জন্য সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করছে এবং উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ডে জড়ানোর জন্য বাধ্য করছে। এছাড়াও ক্যাম্পাসে ছাত্রদের মিছিল মিটিংয়ে বাধ্য করা, দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র দেখিয়ে ভয় দেখানো। ক্যাম্পাসে এদের দৌরাত্ম এত বেশি যে কেউ ভয়ে মুখ খুলতে সাহস করেনি এতদিন। মুখ খুললেই শিবির ট্যাগে হল ছাড়তে বাধ্য করা হয়।

ওই শিক্ষার্থী প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের একসাথে হয়ে এগিয়ে আসার অনুরোধ করেন তিনি। ক্যাম্পাসের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বলেন, সাধারণ ছাত্ররা নিজের জীবন দিয়ে দেশকে স্বাধীন করেছে অথচ মইক ক্যাম্পাস এখনও পরাধীন অবস্থায়ই রয়েছে। ছাত্রলীগের নতুনরূপে ফিরে আসা নিয়ে তিনি শঙ্কা প্রকাশ করেন।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.