The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
শুক্রবার, ২৭শে ডিসেম্বর, ২০২৪

মনি কিশোরের দাফন নিয়ে জটিলতা, এখনো মর্গে মর*দেহ

ডেস্ক রিপোর্ট: নব্বই দশকের জনপ্রিয় শিল্পী মনি কিশোর ছিলেন একাধারে গীতিকার, সুরকার এবং সংগীতশিল্পী। রাজধানীর রামপুরার ভাড়া বাসা থেকে শনিবার (১৯ অক্টোবর) রাতে এই শিল্পীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ময়নাতদন্তের জন্য রোববার তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে। দাফন নিয়ে জটিলতার কারণে এখনো মর্গেই পড়ে আছে সংগীতশিল্পীর মরদেহ।

এর মধ্যে মনি কিশোরের বড় ভাই অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা অশোক কুমার মণ্ডল গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, শিল্পীর মরদেহ আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের মাধ্যমে দাফন করা হবে। কারণ, শিল্পী মনি কিশোর বেঁচে থাকতেই তার মেয়ে নিন্তি চৌধুরীকে বাবার মরদেহ দাফনের কথাই নাকি বলে গিয়েছিলেন।

নব্বই দশকের শুরুতে ‘চার্মিং বউ’ অ্যালবামের ‘কী ছিলে আমার’ শিরোনামের একটি গান মনি কিশোরকে প্রতিষ্ঠিত ও ব্যাপক পরিচিত করে দেয় সংগীতাঙ্গনে। একে একে ৩০টির বেশি একক অ্যালবাম করে ফেলেন। এরপর একসময় অডিও-জগৎ নানা উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে যেতে থাকল। একটা সময় মনি কিশোর অনিয়মিত হয়ে পড়েন।

পেশাদার সংগীতজীবনের শুরুতে বিয়ে করেন মনি কিশোর। শামীমা চৌধুরীর সঙ্গে সেই বিয়ে টেকেনি। দেড় যুগ আগে তাদের দাম্পত্য জীবনের ইতি ঘটে। বিয়ের সময় ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন মনি কিশোর। সে হিসেবে তার মরদেহের দাফন করা হবে বলে জানান বড় ভাই অশোক কুমার।

তিনি জানান, মনি কিশোর বেঁচে থাকা অবস্থায় তার দাফনের বিষয়টি একমাত্র মেয়ে নিন্তি চৌধুরীকে জানিয়েছিলেন। অশোক কুমার বললেন, ‘মেয়ে আমার বড় ভাইকে জানিয়েছে, তার বাবাকে যেন দাফন করা হয়। এটা নাকি ওর বাবা ওকে বলে গিয়েছিল। মেয়েকে যেহেতু বলে গিয়েছে, তাই তার ইচ্ছামতো দাফনের কাজটাই করা হবে। এটা নিয়ে আমরা অন্য কোনো ধরনের সিদ্ধান্তে যাব না।’

পরিবারের তথ্যমতে ময়নাতদন্ত শেষে মনি কিশোরের মরদেহ দাফন হওয়ার কথা থাকলেও এরই মধ্যে পেরিয়ে গেছে দুই দিন। ধর্মান্তরিত হওয়ার প্রমাণাদি না পেলে সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ কর্মকর্তা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছেন না। এদিকে মেয়ে নিন্তি চৌধুরীও দেশে নেই, তিনি থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে। তাই মেয়ের বাংলাদেশে না ফেরা পর্যন্ত বাবা মনি কিশোরের মরদেহের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না রামপুরা থানার পুলিশ কর্মকর্তারাও।

রামপুরা টেলিভিশন ভবনের পাশে একটি ভাড়া বাসায় একা থাকতেন মনি কিশোর। গত শনিবার রাতে এই শিল্পীর চিরদিনের জন্য পৃথিবী থেকে বিদায়ের খবর পাওয়া যায়। রামপুরা থানার উপপরিদর্শক খান আবদুর রহমান তার মরদেহ উদ্ধার করেন।

উদ্ধারকারী এই পুলিশ কর্মকর্তা মঙ্গলবার দুপুরে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আপাতত শিল্পীর মরদেহ মর্গে থাকবে। শিল্পীর মেয়ে দেশে ফিরলেই তার সিদ্ধান্তে যা হওয়ার হবে। অথবা দূতাবাসের মাধ্যমে কোনো চিঠি পাঠিয়ে যদি কাউকে দায়িত্ব দেন, তখনই আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হতো। তা ছাড়া তিনি যে ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন, এ রকম প্রমাণাদি আমাদের সরবরাহ করতে পারলেও হয়। মনি কিশোর সাহেবের মেয়ে নিন্তি চৌধুরীর সঙ্গে আমাদের ওসি তদন্ত স্যারের কথা হয়েছে।’

ওসি তদন্ত শাহাদাত হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘নিন্তি চৌধুরী আমাদের কাছে একটা তথ্য হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়েছেন। আমরা তাকে পরামর্শ দিয়েছি, স্থানীয় দূতাবাস অথবা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যেন পাঠান। এদিকে মেয়েও আমাদের জানিয়েছেন, তার বাবাকে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের মাধ্যমে দাফন করতে। অন্যদিকে পরিবার, ভাই-বোনেরা চেয়েছিলেন হিন্দুধর্মমতে মরদেহের আনুষ্ঠানিকতা সারতে। দুই পক্ষ থেকে দুই ধরনের বক্তব্যের কারণে একটা বিতর্ক ও জটিলতা তৈরি হতে পারে। এই বিতর্ক ও জটিলতার অবসানে আমরা শিল্পী মনি কিশোরের মেয়ে নিন্তি চৌধুরীকে দেশে উপস্থিত হয়ে মরদেহ গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়েছি। তিনি যদি দেশে আসতে না পারেন, তাহলে যথা নিয়মে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহের অনুরোধ করেছি। এরপরই আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারব।’

নব্বই দশক থেকেই গান গেয়ে শ্রোতার মন মাতিয়েছেন মনি কিশোর। সেই কবে গেয়েছিলেন ‘কী ছিলে আমার, বলো না তুমি’, তা আজও অনেক সংগীতপ্রেমী গেয়ে ওঠেন আপনমনে। সেই গানের স্রষ্টা মনি কিশোর দীর্ঘ সময় ধরে ছিলেন লোকচক্ষুর অন্তরালে। অনেকটা অভিমান থেকে নিজেকে আড়াল করে রেখেছিলেন। শেষ দিকে তো এমনও হয়েছে, কেউ যাতে তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারে, নিজের ব্যবহৃত পুরোনো মুঠোফোন নম্বর বন্ধ করে দিয়েছিলেন।

পুলিশ কর্মকর্তা বাবার সাত সন্তানের মধ্যে মনি কিশোর চতুর্থ সন্তান। চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সবচেয়ে বড় ভাই মারা গেছেন। দেড় যুগ আগে মনি কিশোরের সঙ্গে তার স্ত্রীর বিচ্ছেদ হওয়ার পর থেকে একা থাকতেন। তার একমাত্র মেয়ে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী। নড়াইল জেলার লক্ষ্মীপুরে মামাবাড়িতে ১৯৬১ সালের ৯ জানুয়ারি জন্ম মনি কিশোরের। পুলিশ কর্মকর্তা বাবার চাকরিসূত্রে দেশের বিভিন্ন জেলায় থাকা হয়েছে প্রয়াত এই শিল্পীর।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.