The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
শনিবার, ২১শে ডিসেম্বর, ২০২৪

বুয়েট ছাত্র ফারদিনকে খুন করা হয়নি, আত্মহত্যা করেছেন: ডিবি প্রধান

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র ফারদিন নূর পরশ (২৪) অন্তর্মুখী ছিলেন। সবার সঙ্গে সব কিছু শেয়ার করতে পারতেন না। হতাশা থেকে তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।

এমন মন্তব্য করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ।

তিনি বলেন, মৃত্যুর সেই রাতে ফারদিন নারায়ণগঞ্জের চনপাড়ায় যাননি। সর্বশেষ তাকে যাত্রাবাড়ীতে দেখা গেছে। সারা রাত দিকবিদিক ছোটাছুটি করেছেন তিনি।

বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে নিজ কার্যালয়ে এসব কথা বলেন ডিবিপ্রধান।

তিনি বলেন, ফারদিনের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছি। ফারদিন তার বান্ধবী বুশরাকে নামিয়ে দেওয়ার পর ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থান ঘুরে বেড়িয়েছেন। কেরাণীগঞ্জ ব্রিজের পাড়ে গেছেন। এ সময় অনেকের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। কিন্তু কোনো ব্যক্তিকে আমরা তার সঙ্গে দেখতে পাইনি।

হারুন বলেন, সারা রাত ফারদিন এলোমেলো ঘুরে বেড়িয়েছেন। ডিস্টার্ব মাইন্ড না থাকলে কেউ এরকম ঘুরে বেড়ায় না। রামপুরা থেকে কেরাণীগঞ্জ, কেরাণীগঞ্জ থেকে জনসন রোড, জনসন রোড থেকে গুলিস্তান, গুলিস্তান থেকে যাত্রাবাড়ী, এরপর তার নিজের বাসা পার হয়ে চলে গেলেন ব্রিজে (ডেমরা)।

তদন্তের বিস্তারিত তুলে ধরে ডিবিপ্রধান আরও বলেন, আমরা যে লেগুনা চালককে গ্রেপ্তার করেছিলাম, জিজ্ঞাসাবাদে সে কিন্তু বলেছে কোনোভাবেই তাদের লেগুনা চনপাড়ার দিকে যায়নি। কারণ লেগুনা ২টা ৩৪ মিনিটের দিকে ফারদিনকে নিয়ে গেছে ব্রিজের কাছাকাছি। তবে চনপাড়া যায়নি এটা আমাদের তদন্তে পরিস্কার। তাকে কেউ ধরে নিয়ে গেছে অথবা তিনি নিজ থেকেই চনপাড়া গেছে এরকম কোনো আলামত বা সিসিটিভি ফুটেজও আমরা পাইনি।

হারুন বলেন, তার রেজাল্ট গ্রাজুয়ালি খারাপ হচ্ছিল। ১ম সেমিস্টারে সিজিপিএ ৩.১৫, তারপর কমতে কমতে ২.৬৭ হয়। যেটা বাসার লোকজন বা আত্মীয়-স্বজন কেউ জানতো না। বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের উদ্দেশে স্পেন যাওয়ার জন্য ৬০ হাজার টাকা প্রয়োজন ছিল। যেটা জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছিল। বন্ধুরা ৪০ হাজার টাকা দেয়। বুশরা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, হতাশায় ভুগছিল ফারদিন।

ডিবিপ্রধান আরও বলেন, বিভিন্ন জিজ্ঞাসাবাদ, ফারদিনের মরদেহ উদ্ধারের পর চিকিৎসক যে কথাটি বলেছিলেন, সে রকম তথ্য আমরা পাইনি। তার মারপিট বা জামা কাপড় ছেড়া ছিল না। কোথাও ধস্তাধস্তি হয়েছিল কি না বা তার শরীরে ছেঁড়াফাটা মারধরের দাগও আমরা দেখতে পাইনি। সুরতহালে কোনো আঘাতের চিহ্নও পাইনি। বিভিন্নজনকে জিজ্ঞাসাবাদ, মৃত্যুর রাতে তার ঢাকা শহরে ছোটাছুটি, ব্রিজের কাছ পর্যন্ত যাওয়া, হতাশা, মানসিক অবস্থা- সবমিলিয়ে আপাতত দৃষ্টিতে মনে হয়েছে এটা সুইসাইডাল কেস।

হারুন বলেন, ব্রিজের মাঝামাঝি পর্যন্ত গিয়েছিলেন ফারদিন। সেখানেই ছিল তার সর্বশেষ অবস্থান। এরপর একটা পানির শব্দ হয়েছে। সেখান থেকেই আমরা মনে করছি, এটা সুইসাইড।

এ রকমই জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র আত্মহত্যা করেছিল উল্লেখ করে হারুন বলেন, আত্মহত্যার আগে সারা রাত ঢাকা শহরের বিভিন্ন প্রান্তে একা একা ঘুরে বেড়িয়েছিলেন। আমাদের ভিকটিম (ফারদিনও) এ রকম একা একা ঘুরে বেড়িয়েছেন উদ্দেশ্যহীনভাবে। বুশরাকে রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে নামানোর পর উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরে বেড়িয়েছেন এবং কারও সঙ্গে দেখা করেননি। তার গত ১ বছরের সিডিআর পর্যালোচনা করেলে আগে কখনও এমন দেখা যায়নি।

ডিবি পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ফারদিন নিজে টিউশনি করাতেন ৪টা। সব টাকা দিয়ে নিজের ও ছোট দুই ভাইয়ের পড়াশোনা করাতেন। নিজের জন্য কিছু করেন না। তারপরও বাড়িতে শাসন, তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে হবে। হলে থাকা যাবে না। এক ধরনের চাপের মধ্যে ছিল, যেটা ভিকটিম ফারদিন মানতে পারেনি।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.