The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
বৃহস্পতিবার, ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৪

দেশে প্রথম প্লাজমা টেকনোলজি নিয়ে গবেষণা করে সফল রাবি অধ্যাপক ড. তালুকদার

রাবি প্রতিনিধি: পদার্থের চারটি অবস্থা থাকে। আমাদের চারপাশের বস্তুগুলো সাধারণত কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় অবস্থায় থাকে। প্লাজমাকে পদার্থের চতুর্থ অবস্থা বলা হয়। এ অবস্থায় সাধারণত প্রায় সমানসংখ্যক ধনাত্মক চার্জযুক্ত আয়ন ও ঋণাত্মক চার্জযুক্ত ইলেকট্রন থাকে। দেশের প্রধান কৃষিজ শস্য যেমন ধান, গম, আলু, বেগুন ও পালংশাকে প্লাজমা টেকনোলজি প্রয়োগের ফলে বীজের অঙ্কুরোদাম, ফসলের উৎপাদন হার বৃদ্ধি, উৎপাদন সময় হ্রাস এবং রোগবালাই দমনে ভূমিকা রেখেছে। সম্প্রতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগে অবস্থিত প্লাজমা সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ল্যাবের গবেষণায় এটি প্রমাণিত হয়েছে।

ল্যাব সূত্রে জানা গেছে, প্লাজমা টেকনোলজি ব্যবহারে দেশের প্রথম এবং একমাত্র গবেষণাগার হলো প্লাজমা সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ল্যাব। এটি ২০০৯ সালে যাত্রা শুরু করে। যেখানে প্লাজমার প্রায়োগিক ব্যবহার নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে শিক্ষা ও গবেষণার উন্নয়নে কাজ করা হয়। এটি পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইইই বিভাগের অধ্যাপক ড. মামুনুর রশিদ তালুকদার। প্লাজমা টেকনোলজি প্রয়োগ পদ্ধতির উদ্ভাবকও তিনি।

গবেষণায় দেখা গেছে, প্রচলিত পদ্ধতিতে ধান বীজের অঙ্কুরোদগম হার ৭৫ শতাংশ। সেখানে প্লাজমা টেকনোলজি প্রয়োগের ফলে ২১ শতাংশ বেড়ে অঙ্কুরোদগম হয় ৯৬ শতাংশ। একইভাবে গম ৭৫ থেকে বেড়ে ৯৫ শতাংশ, বেগুন ৫০ থেকে বেড়ে ৮০ শতাংশ এবং পালংশাকের অঙ্কুরোদগম হার বাড়ে ৭০ থেকে ৯২ শতাংশ পর্যন্ত। এ পদ্ধতি প্রয়োগের ফলে বীজের পরিমাণ কম লাগে, উৎপাদনও বেশি হয় এবং উৎপাদন সময়ও ১০-২০ শতাংশ কম লাগে।

এছাড়া প্রচলিত পদ্ধতিতে বাংলাদেশে ধান বীজের পরিমাণ ২ লাখ ৮৭ হাজার ৫০০ টন প্রয়োজন হয় (বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০২১ সালের তথ্যানুসারে), সেখানে প্লাজমা টেকনোলজি প্রয়োগের মাধ্যমে ২ লাখ ৪১ হাজার ৫০০ টন বীজ প্রয়োজন হবে। অর্থাৎ ৪৬ হাজার টন বীজ কম লাগবে। একইভাবে গম বীজের ক্ষেত্রে এক লাখ টনের স্থানে ৮৫ হাজার টন এবং বেগুন বীজের ক্ষেত্রে ২৫ হাজার কেজির স্থানে ২২ হাজার কেজি প্রয়োজন হবে।

প্রচলিত পদ্ধতিতে বাংলাদেশে ১১৫ লাখ হেক্টর জমিতে ধান উৎপাদন হয়েছিল ৩৭ লাখ ৬০ হাজার ৮০০ টন (বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০২১ সালের তথ্য অনুসারে)। সেখানে প্লাজমা টেকনোলজি প্রয়োগের মাধ্যমে ৪৩ লাখ ৮৭ হাজার ৮০০ টন ধান উৎপাদন সম্ভব হবে। অর্থাৎ ৬ লাখ ২৭ হাজার টন ধান উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব। একইভাবে গম উৎপাদন ১০ লাখ ৯৯ হাজার টন থেকে ১২ লাখ ৩৪ হাজার টন, বেগুন উৎপাদন ৫ লাখ ৭ হাজার থেকে ৬ লাখ ১৮ হাজার টন, পালংশাক ৫৮ হাজার থেকে ৮৯ হাজার টন এবং আলু ৯৮ লাখ ৮৭ হাজার থেকে ১ কোটি ১২ লাখ ৮৭ হাজার টন উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব।

উল্লিখিত গবেষণা প্রবন্ধসমূহ স্প্রিঞ্জর (Springer), এলসেভিয়ার (Elsevier), ইন্সটিটিউট অব ফিজিক্স (Institute of Physics) সহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক প্রকাশনা সংস্থাসমূহের জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

প্লাজমা টেকনোলজি প্রয়োগ পদ্ধতির উদ্ভাবন সম্পর্কে ড. তালুকদার বলেন, ‘একক তত্ত্বাবধানে ল্যাব থেকে প্লাজমা টেকনোলজি কৃষি গবেষণায় প্রয়োগের প্রথম সফলতা আসে ২০১৫ সালে। গবেষণার প্রথম গবেষক ছিলেন ড. নেপাল চন্দ্র রায়। পরবর্তী সময়ে কয়েকজন শিক্ষার্থীর সহযোগিতায় গবেষণাগারে কৃষি ক্ষেত্রে প্লাজমা টেকনোলজি প্রয়োগের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্লাজমা সোর্স যেমন গ্লাইডিং আর্ক ডিসচার্জ প্লাজমা, ডাইইলেকট্রিক ব্যারিয়ার ডিসচার্জ প্লাজমা, গ্লো ডিসচার্জ প্লাজমা ইত্যাদি তৈরি করা হয়। এ সোর্সগুলো সফলভাবে ব্যবহার করে শস্যের বীজ ট্রিটমেন্ট ও প্লাজমা সক্রিয় পানি প্রয়োগের মাধ্যমে বীজের অঙ্কুরোদগম হার, ফসলের উৎপাদন হার বৃদ্ধি, উৎপাদন সময় হ্রাস এবং রোগবালাই দমনে ভূমিকা রেখেছে।’

ড. মামুনুর দাবি করেন, বিশ্বে আমাদের ল্যাবই সর্বপ্রথম, যেখানে কৃষি ক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়ে প্লাজমা টেকনোলজি প্রয়োগের মাধ্যমে শস্যের উৎপাদন হার বাড়ানো নিয়ে কাজ করা হয়েছে। এর আগে একটা বা দুইটা কাজ হয়েছিল, সেটি ল্যাবভিত্তিক ছিল। এ গবেষণায় গ্লাইডিং আর্ক ডিসচার্জ প্লাজমা সোর্সের মাধ্যমে ইলেকট্রোডদ্বয়ের মাঝে হাইভোল্টেজ প্রয়োগ করে প্লাজমা তৈরি করা হয়। এতে গম বীজ ট্রিটমেন্ট করে বীজের অঙ্কুরোদগম ৯৫- ১০০ ও উৎপাদন ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। এছাড়া ডাইইলেকট্রিক ব্যারিয়ার ডিসচার্জ প্লাজমা সোর্সের মাধ্যমে কৃষিজ পণ্য যেমন মাষকলাই বীজ ট্রিটমেন্ট করে অঙ্কুরোদগম ৮৫-৯০, উৎপাদন ৩৭ শতাংশ এবং ক্লোরোফিল, প্রোটিন ও সুগারের মাত্রা বৃদ্ধিতে সফলভাবে কাজ করেছে। গ্লো ডিসচার্জ প্লাজমা সোর্সের মাধ্যমে কৃষিজ ফসল যেমন ধান ট্রিটমেন্ট করে বীজের অঙ্কুরোদগম ৯৫-১০০, ফসলের বিকাশ ও উৎপাদন হার ১৭ শতাংশ বৃদ্ধিতে সফলভাবে কাজ করেছে।

ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগ থেকে কৃষি ক্ষেত্রে গবেষণার আগ্রহ নিয়ে জানতে চাইলে ড. মামুনুর রশিদ বলেন, ‘আমি ভবিষ্যতে মানুষের জন্য কি রেখে যাব সে আত্মতুষ্টির জায়গা থেকেই কৃষি গবেষণায় গবেষণা করতে আসা। বাংলাদশের মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ও কৃষি প্রযুক্তি উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করার চেষ্টা করছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও সার্বিক সহযোগিতা করছে।’

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.