The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
বুধবার, ৩০শে অক্টোবর, ২০২৪

ঢাকা বোর্ডের তদন্তেও মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষের নিয়োগ অবৈধ

পৌনে দুই বছর আগে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) তদন্তে রাজধানীর মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ পদে মো. ফরহাদ হোসেনের নিয়োগ অবৈধ প্রমাণিত হয়েছিল। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এবার ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের তদন্ত কমিটিও বলল, অধ্যক্ষ পদে ফরহাদ হোসেনের চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধি বিধিসম্মত হয়নি। অর্থাৎ তাঁর নিয়োগটি অবৈধ।

এখন প্রতিষ্ঠানটির একজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষককে অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়ার জন্য ব্যবস্থা নিতে মাউশির কাছে চিঠিটি দেওয়া হবে বলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেছেন, নতুন অধ্যক্ষ আসার পরপরই এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করা হবে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের ‘জোরপূর্বক’ এমপিও (বেতন বাবদ মাসিক সরকারি অনুদান) প্রত্যাহারের কথা বলা হলেও সেটি কার্যকর হয়নি। শিক্ষকেরা এমপিওভুক্তির টাকা না পেলেও সরকারি কোষাগার থেকে ঠিকই প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতার সরকারি অংশ পাঠানো হচ্ছে।

দীর্ঘদিন ধরেই নানা রকমের অভিযোগ নিয়ে মিরপুর এলাকায় অবস্থিত রাজধানীর মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ নিয়ে আলোচনা চলছে। অভিযোগ রয়েছে, স্কুল পরিচালনায় সম্পৃক্ত একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠী রাজধানীর অন্যতম বড় এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ‘ইচ্ছেমতো’ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এ অবস্থায় ঢাকা শিক্ষা বোর্ড এসব অভিযোগ তদন্ত করার জন্য মাউশির ঢাকা অঞ্চলের পরিচালক অধ্যাপক মো. মনোয়ার হোসেনকে দায়িত্ব দেয়। কমিটি তদন্তকাজ শেষ করে কয়েক দিন আগে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
প্রতিবেদন পাওয়ার কথা জানিয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার প্রথম আলোকে বলেন, এখন এ বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মাউশির কাছে চিঠি দেবেন তাঁরা।

১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় মনিপুর উচ্চবিদ্যালয়। এখন উচ্চমাধ্যমিকও চালু হয়েছে। মূল ক্যাম্পাসসহ চারটি শাখায় এর কার্যক্রম চলে। শিক্ষার্থী প্রায় ৩৭ হাজার। শিক্ষক আছেন আট শতাধিক। আর কর্মচারী আছেন পৌনে দুই শর মতো। প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত হয় ১৯৮৩ সালে। তবে সব শিক্ষক-কর্মচারী এমপিওভুক্ত নন। বর্তমানে ৬৯ জন এমপিওভুক্ত। এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের সরকার মূল বেতনসহ কিছু ভাতা দেয়।

যা বলা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের তদন্ত কমিটি মূলত তিনটি অভিযোগ তদন্ত করেছে। প্রথম অভিযোগটি ছিল, পরিচালনা কমিটি নিয়ম ভঙ্গ করে ৬০ বছর বয়স হওয়ার পরও ফরহাদ হোসেনের (অধ্যক্ষ) চাকরির মেয়াদ বাড়িয়েছে। এ নিয়োগ সঠিক কি না, তা যাচাই করে দেখেছে কমিটি। এ বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, এসএসসি পাসের সনদ অনুসারে ২০২০ সালের ২ জুলাই ফরহাদ হোসেনের বয়স ৬০ বছর পূর্ণ হয়েছে। কাজেই তাঁর ক্ষেত্রে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০২১ প্রযোজ্য হবে না। তাঁর নিয়োগের (চুক্তিতে) ক্ষেত্রে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবলকাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০১৮ প্রযোজ্য হবে। যাতে কোনো প্রতিষ্ঠানপ্রধান, সহকারী প্রধান ও শিক্ষক-কর্মচারীকে পুনর্নিয়োগ অথবা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ জন্য ফরহাদ হোসেনের চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধি সঠিক ও বিধিসম্মত হয়নি।

এর আগে অধ্যক্ষ (প্রধান শিক্ষক থেকে অধ্যক্ষ) মো. ফরহাদ হোসেনের বিরুদ্ধে ওঠা অনিয়ম তদন্ত করে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল মাউশির একটি তদন্ত কমিটি। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, সব কাগজপত্র যাচাই-বাছাই ও সরেজমিন তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি মনে করে, ফরহাদ হোসেনের প্রধান শিক্ষক থেকে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ বিধিসম্মত নয়। কারণ, তাঁর বয়স ৬০ বছর অতিবাহিত হয়েছে। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (স্কুল-কলেজ) জনবলকাঠামো ও এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী, বয়স ৬০ বছর হওয়ার পর কোনো প্রতিষ্ঠানপ্রধানকে কোনো অবস্থাতেই পুনর্নিয়োগ বা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া যাবে না। এ জন্য নীতিমালা মেনে নতুন অধ্যক্ষ নিয়োগের সুপারিশ করলেও তা মানেনি প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ।

প্রতিষ্ঠানটির এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পক্ষ থেকে অভিযোগ ছিল, তাঁদের ‘জোরপূর্বক’ এমপিও প্রত্যাহারে সই নেওয়া হয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ ২০১৬ সালে এমপিও প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিলেও সরকার তা গ্রহণ করেনি। সরকারের খাতায় প্রতিষ্ঠানটি এখনো এমপিওভুক্ত। এ জন্য এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন বাবদ প্রতি মাসে বিপুল পরিমাণ টাকা দিচ্ছে সরকার। মাউশি গত এপ্রিল মাসেও এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীর জন্য বেতন বাবদ ১৪ লাখ ৩৯ হাজারের বেশি টাকা দিয়েছে। এর বাইরে ‘বৈশাখী উৎসব ভাতা’ বাবদ দেওয়া হয়েছে আরও প্রায় তিন লাখ টাকা। কিন্তু এ টাকা পান না শিক্ষক-কর্মচারীরা। কারণ, বেতন বিলে সই করছে না প্রতিষ্ঠানের বর্তমান কর্তৃপক্ষ।

এমপিও প্রত্যাহারের বিষয়টি কার্যকর হয়েছে কি না সেটি তদন্ত করে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষকদের এমপিও প্রত্যাহার সম্পূর্ণরূপে কার্যকর হয়নি। প্রতিষ্ঠানের এমপিও কোড (একটি নির্দিষ্ট হিসাব) তদন্তকাল পর্যন্তও চালু ছিল। এ ছাড়া তদন্তকালে উপস্থিত এমপিওভুক্ত সব শিক্ষক-কর্মচারী তাঁদের এমপিও ফিরে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছেন।

এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানের পাঠদানের মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়টিও তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.