The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
শুক্রবার, ১৩ই ডিসেম্বর, ২০২৪

জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি হবে চব্বিশের গণবিপ্লব: জামায়াত আমির

ডেস্ক রিপোর্ট: জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, রাজনীতিতে বলা হয় ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়। কিন্তু বাংলাদেশের ৫৩ বছরের ইতিহাসে রাজনীতিবিদরা এই স্লোগান প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। বর্তমান প্রজন্ম আর এই ব্যর্থতা দেখতে প্রস্তুত নয়। তারা চায় রাজনীতিবিদদের সফল হতেই হবে। জাতির সঙ্গে দেওয়া সব কমিটমেন্ট অবশ্যই তাদের রক্ষা করতে হবে।

তিনি বলেন, আমাদের বার্তা পরিষ্কার। আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি হবে ২৪-এর গণবিপ্লব। এই গণবিপ্লবের চেতনাকে পাস কাটিয়ে আমাদের দল এবং কোনো দল যেন ভিন্ন পথে হাঁটার চিন্তা না করে। যারাই হাঁটবেন তাদেরই স্বৈরাচারের রাস্তা ধরতে হবে।

শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) সকালে গাজীপুর মহানগরীর টেকনগপাড়া এলাকার একটি কমিউনিটি সেন্টারে গাজীপুর জেলা জামায়াতের উদ্যোগে আয়োজিত দলের রুকন সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমি আমার দলকে সতর্ক করছি এবং সব রাজনৈতিক দলকেও সতর্ক করছি। জনগণের চেতনার বিপক্ষে আমরা যেন কেউ না দাঁড়াই। আমাদের অবশ্যই জনগণের পক্ষে শক্ত করে দাঁড়াতে হবে। জনগণের ন্যায্য দাবি যদি থাকে সে দাবিকে পাশ কাটানোর চেষ্টা বা দুঃসাহস আমরা যেন কেউ না দেখাই। কিন্তু হ্যাঁ, যদি জনগণের মধ্য থেকে কোনো একটি বিশেষ মহল জাতিকে ধোঁকা দেওয়ার জন্য, প্রতারণা করার জন্য কোনো কিছু নিয়ে আসে সে ক্ষেত্রেও আমাদের লক্ষ্য থাকবে তাদের প্রতিহত করার জন্য।

তিনি বলেন, জাতি, ধর্ম, দল, মত নির্বিশেষে বাংলাদেশ আমাদের সবার। প্রিয় দেশ শান্তিতে থাকবে, সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত থাকবে, মানুষের মৌলিক অধিকার সুরক্ষিত হবে, প্রতিটি নাগরিক মর্যাদাবান নাগরিক হিসেবে পরিচয় দিয়ে স্বস্তিবোধ করবে। আমরা চাই দেশে-প্রবাসে যারাই আছেন, তারা একজন গর্বিত বাংলাদেশি হিসেবে যেন নিজের পরিচয় স্বাচ্ছন্দ্যে প্রকাশ করতে পারেন। জামায়াতে ইসলামী এমন একটি মানবিক সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখে। যে সমাজে সীমাহীন বৈষম্য থাকবে না এবং মানুষের অধিকারের প্রতি কেউ হস্তক্ষেপ করার দুঃসাহস দেখাবে না।

শফিকুর রহমান বলেন, সম্প্রতি জুলাই আন্দোলনে যারা জীবন দিয়েছে, আমাদের কলিজার টুকরা এই ছেলেমেয়েদের প্রধান দাবি ছিল, আমরা সুবিচার চাই। সুবিচার যে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হবে, সেখানে ডাকাত এবং চোরের কোনো জায়গা নেই। সেখানে সম্পদ লুণ্ঠন করে বিদেশে পাচারের কোনো সুযোগ নেই। যেখানে সুবিচার প্রতিষ্ঠিত হবে সেখানে ঘুষের রমরমা বাণিজ্য চলবে না। তিনি বিগত সরকারের নানা অপকর্মের কথা তুলে ধরে বলেন, আগের সরকারের মন্ত্রীরা, এমনকি অর্থমন্ত্রী একসময় বলত, ঘুষকে এখন ঘুষ বলা ঠিক হবে না, এটাকে স্পিড মানি বলতে হবে। তারা ঘুষকে এভাবে জাতীয়করণ করেছিলেন। আরেক মন্ত্রী বলতেন, আমার মন্ত্রণালয়ে ঘুষ খাবেন কিন্তু একটু কম করে নিয়েন।

জামায়াতের এ শীর্ষ নেতা বলেন, আমরা এমন বিচিত্র সংসদ এবং সরকার পেয়েছিলাম, সেই সংসদ এবং সরকার জনগণের জন্য ছিল না। সেখানে ব্যক্তি বন্দনায় নেচে-গেয়ে জনগণের টাকা নষ্ট করা হতো। এক ব্যক্তির ইশারায় সবকিছু উঠত এবং বসত। ইতিহাসে এমন দুর্ধর্ষ শাসক যারা ছিল, স্বৈরশাসক যারা ছিল, তারা বলত আমি হচ্ছি সবচেয়ে বড় রব। তারা আল্লাহকে ভয় করে না, তারা ক্ষমতায় যাওয়ার আগে মানুষের পায়ে ধরে, হাতজোড় করে মানুষের কাছে ক্ষমা চায়, কান্নাকাটি করে, চোখের পানি ফেলে। যখন ক্ষমতায় যায়, তখন দেশের আপামর মানুষের চোখের পানি ঝরানোর ব্যবস্থা করে। গত ১৫ বছর জাতি বেদনার সঙ্গে সেটাই লক্ষ করেছে।

বিগত আন্দোলনে প্রবাসীদের ভূমিকার কথা স্মরণ করে জামায়াত আমির বলেন, প্রবাসীরা লাঞ্ছিত ছিলেন, অধিকার বঞ্চিত ছিলেন। এ জন্য জুলাই-আগস্ট শুরু হওয়ার পর আপনারা লক্ষ করেছেন, তারা রেমিট্যান্স যোদ্ধা হিসেবে স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল। এ কারণে স্বৈরশাসকের ভিত কেঁপে উঠেছিল থরথর করে। এজন্য হাত জোড় করে তাদের কাছে মিনতি চাওয়া হয়েছে, দেশের জন্য রেমিট্যান্স পাঠান। কিন্তু ধোঁকাবাজদের কথায় তারা (প্রবাসীরা) মোটেও বিচলিত হননি। তারা তাদের সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন। আবার জালিমের পতন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাতে ধরে রাখা সব অর্থ তারা দেশের উন্নয়নের জন্য পাঠিয়ে দিয়েছেন। এজন্য তাদের মোবারকবাদ।

জাতীয় সংকটে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এই যে দেশে-বিদেশে এত মানুষ ত্যাগ ও কোরবানি শিকার করল হাজার প্রাণের বিনিময়ে, এখন জনগণের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্ব অনেক বেড়ে গেল। আমরা বলেছি, দল এবং ধর্ম যার যার, দেশ আমাদের সবার। দেশের মৌলিক স্বার্থে দলগুলোর মধ্যে কোনো ধরনের বিভাজন এই জাতি কামনা করে না। সব জাতীয় সংকট ঐক্যবদ্ধভাবে এ জাতি মোকাবিলা করবে।

জামায়াত আমির আরও বলেন, একটা নাগরিক সে যে পর্যায়ের থাকুক না কেন, যে দলের হোক, যে ধর্মের হোক- সে আদালতে গেলে ন্যায়বিচার পাবে। ওখানে ন্যায়বিচার বঞ্চিত হবে না। কারও টেলিফোনের কারণে একজন নাগরিকের জীবনে অত্যাচারের স্টিমরোলার আসবে না। মানুষকে তারা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করবে না। বিচারপ্রার্থীর ন্যায়বিচার না পেয়ে এ দুয়ার সে দুয়ারে ঘুরবে না। বিচার তাকে নিশ্চিত করতেই হবে। ইসলামই কেবল তার গ্যারান্টি দিতে পারে। ইসলাম বাস্তবে এটা প্রমাণ করেছে যে, ইসলামের পক্ষেই এটার গ্যারান্টি দেওয়া সম্ভব। বিচার কারও মুখ দেখে কিংবা টেলিফোনে প্রভাবিত হবে না ইনশাল্লাহ। এমন একটি রাষ্ট্র আমরা গড়তে চাই, দেখতে চাই। সেই কল্যাণ সেই মানবিক রাষ্ট্রের অভিযাত্রী হিসেবে আমরা দেশবাসীর সহযোগিতা চাই, দোয়া চাই এবং পাশে চাই।

জেলা জামায়াতের আমির ড. জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য অধ্যক্ষ মো. ইজ্জত উল্লাহ ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী। এ ছাড়া জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মো. সফি উদ্দিন, জেলা নায়েবে আমির আব্দুল হাকিম ও মাওলানা সেফাউল হক, জেলা সহকারী সেক্রেটারি আনিসুর রহমান বিশ্বাস, প্রচার সম্পাদক অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান, মহানগর জামায়াতের আমির অধ্যাপক জামাল উদ্দিন, নায়েবে আমির খায়রুল হাসান, সেক্রেটারি আবু সাইদ ফারুক প্রমুখ।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.