The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
বুধবার, ৩০শে অক্টোবর, ২০২৪

গৌরব-ঐতিহ্যের ৭২ বছরে রাবি, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা-প্রাপ্তি

রাবি প্রতিনিধি: গৌরব ও ঐতিহ্যের সঙ্গে ৭১ শেষ করে ৭২ বছরে পা রেখেছে প্রাচ্যের ক্যামব্রিজখ্যাত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)। ১৯৫৩ সালে রোপণ করা বীজটি বতর্মানে বিশাল মহিরুহে পরিণত হয়েছে। আজ থেকে ৭১ বছর আগে ৭টি বিভাগের ১৫৬ জন ছাত্র ও ৫ জন ছাত্রী নিয়ে যাত্রা শুরু করে রাবি; বর্তমানে ১২টি অনুষদে ৫৯টি বিভাগ ও ৬টি ইনস্টিটিউটে রয়েছে প্রায় ৩৮ হাজার শিক্ষার্থী।

উনিশশো বাহাত্তর সালের শিক্ষা আন্দোলন, ৬ দফা, উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, মহান মুক্তিযুদ্ধসহ প্রতিটি ঐতিহাসিক ঘটনায় সূতিকাগার হিসেবে প্রত্যক্ষভাবে অংশ নিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
দেশের মাটি ও মানুষের সব ধরনের ক্রান্তিলগ্নে সামনের সারিতে থেকে পথের দিশা, আলোর ঝলকানি দেখিয়েছে দেশের দ্বিতীয় প্রাচীন এ বিদ্যাপীঠ।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আছে হাসান আজিজুল হকের মতো কথাসাহিত্যিক, আছে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতো জগদ্বিখ্যাত ভাষাবিজ্ঞানী ও পণ্ডিত। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহামান্য রাষ্ট্রপতি মোহাম্মাদ সাহাবুদ্দিনও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী। সর্বত্র আজও নেতৃত্বের স্থান ধরে রেখেছে এ বিশ্ববিদ্যালয়টি। সেটা হোক রাজনীতি, অর্থনীতি, আমলা কিংবা ব্যবসায়।

দীর্ঘ ৭২ বছর পার করলেও এখনো অনেক কিছু নেই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের। নেই ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য পর্যাপ্ত আবাসন ব্যবস্থা, নেই পর্যাপ্ত গবেষণা; গবেষণার জন্য নেই পর্যাপ্ত বরাদ্দ। আবার শিক্ষার্থী, সাবেক শিক্ষার্থী ও পুরো দেশবাসীরও এ বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে প্রত্যাশার শেষ নেই।
প্রত্যাশা-প্রাপ্তির মেলবন্ধনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় শিক্ষার্থীদের গবেষণাগুলোকে বাস্তবে রূপ দিতে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার দাবিও তাদের।

রাবিকে নিয়ে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মো. মাহামুদুল হাসান শাওন জানান, শিক্ষার মান উন্নয়ন, গবেষণা কার্যক্রম বৃদ্ধি এবং প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনে উৎকর্ষতা অর্জনের লক্ষ্যে রাবি দীর্ঘ ৭২ বছর ধরে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে। প্রশিক্ষিত শিক্ষকমণ্ডলী ও উন্নত কোর্স প্রোগ্রামের মাধ্যমে শিক্ষার মান বৃদ্ধি পেয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের দক্ষতা ও কর্মক্ষমতা বাড়িয়েছে।

গবেষণামূলক প্রকল্পে সাফল্য অর্জনের পাশাপাশি রাবি আন্তর্জাতিক অংশীদারত্বের মাধ্যমে শিক্ষার মান ও গবেষণার ক্ষেত্র সম্প্রসারিত করেছে। দেশের প্রথম ক্যাশলেস ক্যাম্পাস হতে যাচ্ছে রাবি এবং ভর্তি পরীক্ষা বিকেন্দ্রীকরণের সিদ্ধান্তও প্রশংসনীয়।

নিয়মিত সমাবর্তন আয়োজন, হলের ডাইনিংয়ে ভর্তুকি দিয়ে খাবারের মান উন্নয়ন, ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক উন্নয়ন, সহ-শিক্ষা কার্যক্রমে শিক্ষকদের ভূমিকা বৃদ্ধি, মেডিকেল সেন্টারের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি ও সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণে আরো সুনজর দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করি।
একই সাথে নিয়োগে স্বচ্ছতা, সিট বাণিজ্য বন্ধ, , কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে সামসময়িক বইয়ের সংগ্রহ বৃদ্ধি, রিডিং রুমের অপ্রতুলতা দূরীকরণ, ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরীণ সড়কের দ্রুত সংস্কার এবং বহিরাগতদের অবাধ বিচরণ রোধে ও সার্বিক নিরাপত্তা উন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।

বিশ্ববিদ্যালয় পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, ৭২ বছর একটা ছোট সংখ্যা নয় বরং একটা দীর্ঘ সময়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান। এই ৭২ বছরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্জন যেমন আছে, তেমনি আছে সীমাবদ্ধতাও। এরই মধ্য দিয়ে রাবি আগোনোর চেষ্টা করেছে, কখনোও হোঁচটও খেয়েছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সবদিকেই যে সবকিছু অর্জন করেছে তা নয়; আবার কোনো কিছুই অর্জন করিনি তাও বলা সমীচীন নয়। বিশ্ববিদ্যালয় যে অর্থে বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে ওঠে যে মুক্তচিন্তা-বুদ্ধি, স্থান, একটা গণতান্ত্রিক শিক্ষাব্যবস্থা, চিন্তার স্বাধীনতা, পঠন-পাঠন ও গবেষণার যতটুকু অর্জন করতে পারতো বা করা উচিত ছিল ততটুু হয়নি। আসলে এর পিছনে সামাজিক, রাজনীতি ও রাষ্ট্রীয় কাঠামো আসে এ সব কিছু মিলে যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় যতটুকু দিতে পারতো ততটুকু দিতে পারেনি।

আমাদের অসুবিধাগুলে প্রায় সবার কাছে জানা। এখন কীভাবে এ সমস্যাগুলো সমাধান করা যায় এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা একসাথে কাজ করে তাহলে এ বিশ্ববিদ্যালয় আরো ভালো করতে পারবে।

জানতে চাইলে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিনিয়ত এখান থেকে বহু শিক্ষার্থী পড়াশোনা শেষ করে তাদের মেধার স্মারক রেখে দেশে উন্নয়ন অবদান রেখে চলছে।

৭২ বছর আগে এ অঞ্চলের মানুষেরা যে স্বপ্ন নিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন, হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে সুশিক্ষিত করে জনশক্তিতে রূপান্তরিত করে দেশ ও জাতির কারিগর হিসাবে তুলে ধরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সেই স্বপ্ন অনেকাংশে পূরণ করতে পেরেছে বলে আমি মনে করি।

যদিও আধুনিক বিশ্বের চাহিদা অনুসারে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে আছে। সেটি আমরা সবাই জানি। এটা থেকে উত্তরণের জন্য দেশের সরকার, দেশের জনগণ, আমাদের উৎসাহী ও গবেষণামুখী শিক্ষার্থী এবং সেই সাথে আত্মনিবেদিত শিক্ষকদের দরকার আছে। এসব জায়গায় সবাই এগিয়ে আসতে পারলে আমরা আমাদের প্রত্যাশাগুলো পূরণ করতে পারব।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.