The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
বুধবার, ৩০শে অক্টোবর, ২০২৪

আইন মেনে নিজস্ব ভর্তি প্রক্রিয়ায় ফেরার দাবি জবি শিক্ষক সমিতির

সাকিবুল ইসলাম, জবিঃ আসন্ন ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে তৃতীয় বারের মতো অনুষ্ঠিতব্য গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় অংশগ্রহণ না করে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় শিক্ষার্থী ভর্তি প্রক্রিয়ার দাবি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি।

বুধবার (২২ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক লাউঞ্জে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষক সমিতির নেতারা নিজস্ব পদ্ধতিতে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তির প্রয়োজনীয় কার্যক্রম দ্রুত বাস্তবায়ন করার দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষক নেতারা বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০০৫ অনুযায়ী একাডেমিক কাউন্সিল ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ। কাজেই আইনানুযায়ী একাডেমিক কাউন্সিলে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আর কোন বাঁধা থাকতে পারে না। একাডেমিক কাউন্সিলে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা থেকে বেরিয়ে নিজস্ব পদ্ধতিতে এককভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয় এবং এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে ৭০০ এর অধিক সহকর্মীর কেউই কোন দ্বিমত প্রকাশ করেননি। তাই ভর্তি পরীক্ষার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ আইন অনুযায়ী একাডেমিক কাউন্সিল। এখন একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত না মানলে তা লঙ্ঘন হবে আর নাহয় নতুন করে আইন সংশোধন করতে হবে। আর এমনটি হলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ২০০৫ এর ৪০ ধারা লঙ্ঘিত হবে।

একাডেমিক কাউন্সিলে গুচ্ছে না থাকার সিদ্ধান্ত হলেও ইউজিসি বলছে গুচ্ছে যাচ্ছে জবি। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে গুচ্ছে থাকা না থাকা নিয়ে সিন্ডিকেট সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে।

চলতি বছরের ১৫ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৪ তম একাডেমিক কাউন্সিলে (বিশেষ) সর্বসম্মতিক্রমে গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বের হয়ে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় স্বতন্ত্র ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তবে ২০ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) এক সভায় সিদ্ধান্ত নেয়, গুচ্ছ পদ্ধতিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ গুচ্ছ পদ্ধতিতে থাকা পূর্বের সকল বিশ্ববিদ্যালয়কেই অংশগ্রহণ করতে হবে। এজন্য সব বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রস্তুতি গ্রহণেরও নির্দেশনা দেয়া হয়।

তবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৫ এর ৪০ ধারায় উল্লেখ রয়েছে, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও অন্যান্য পাঠ্যক্রমে ছাত্রভর্তি একাডেমিক কাউন্সিল কর্তৃক এতদুদ্দেশ্যে নিযুক্ত ভর্তি কমিটি কর্তৃক প্রণীত বিধি দ্বারা পরিচালিত হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ওপর হস্তক্ষেপ করে জোর পূর্বক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে গুচ্ছে থাকার চাপ দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। জাতীয় সংসদ কর্তৃক প্রণীত এই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সময়ক্ষেপণ না করে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তির প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান তারা।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির দাবি, গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষার কারণে নিজস্ব স্বকীয়তা হারাচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্বশাসন সংরক্ষণ, নিজস্ব স্বকীয়তা রক্ষা, গুচ্ছ পদ্ধতির নানা অসংগতি ও হয়রানি বন্ধ না হওয়া, সাধারণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে “গুচ্ছ এবং গুচ্ছের বাইরে” এই দুইভাগে বিভক্ত করে স্বায়ত্বশাসন নীতির মধ্যে বৈষম্য হচ্ছে।

এদিকে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় সর্বসম্মতিক্রমে শিক্ষার্থী ভর্তি ও পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে একাডেমিক কমিটিতে আলোচনা করে গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়া থেকে বেরিয়ে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের পক্ষে চিঠি দেয় শিক্ষক সমিতি। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৬ টি বিভাগ ও ২ টি ইন্সটিটিউট একাডেমিক কমিটিতে বিস্তারিত আলোচনা করে স্ব-প্রণোদিত হয়ে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় স্বতন্ত্র ভর্তি প্রক্রিয়ার পক্ষে অবস্থান নেয়।

এরপর শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে উপাচার্য বরাবর বার বার দাবি জানানোর পর গুচ্ছ পদ্ধতিতে থাকা না থাকা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বিশেষ একাডেমিক কাউন্সিল আহ্বান করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এরপর ২২ ও ২৭ ফেব্রুয়ারি দুই দফায় একাডেমিক কাউন্সিল স্থগিত করে প্রশাসন। ১৫ মার্চ অনুষ্ঠিত বিশেষ একাডেমিক কাউন্সিলে গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বের হয়ে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় স্বতন্ত্র ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

এদিকে ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় একইসাথে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করলেও গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চেয়ে শিক্ষা-কার্যক্রমে ছয় মাস এগিয়ে রয়েছে। এতে সেশনজটে পড়েছেন গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যায়গুলোতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. এ কে এম লুৎফর রহমান বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী একাডেমিক কাউন্সিল ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ। কাজেই একাডেমিক কাউন্সিলে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আর কোনো বাধা থাকতে পারেনা।

ইউজিসির সচিব ড. ফেরদৌস জামান, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন সরকারই পাশ করেছে। আবার শিক্ষার্থীদের দূর্ভোগ লাঘব করার জন্য সরকারই বৃহৎ স্বার্থে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষায় সবাইকে অংশগ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য্য একাধিকবার গুচ্ছ পদ্ধতির জন্য নির্দেশনা দিয়েছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকেও নির্দেশনা দিয়েছে। ইউজিসি শুধু তা বাস্তবায়নের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অনুরোধ করেছে।

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক জানান, ইউজিসি তাদের সিদ্ধান্তের কথা আমাদের জানিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন তো আছেই। একাডেমিক কাউন্সিলের চেয়ে তো সিন্ডিকেট বড়। সিন্ডিকেটেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.